ইউক্রেন নিয়ে বসছেন বাইডেন ও পুতিন
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জানুয়ারিতে ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে বহু প্রত্যাশিত আলোচনায় বসবে। রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের দাবিসহ মস্কো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানানোর পর আলোচনার বিষয়টি উঠে এল।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র গত সোমবার রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ১০ জানুয়ারি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভও তারিখটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জেনেভায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত জুন মাসে এখানেই প্রথম সম্মেলন করেছিলেন বাইডেন ও পুতিন।
ক্রেমলিন ক্রমবর্ধমানভাবে জোর দিয়ে বলছে, পশ্চিমা দেশগুলো এবং ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি বিপজ্জনকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এই মাসের শুরুর দিকে মস্কো পশ্চিমাদের কাছে ব্যাপক নিরাপত্তার দাবি তুলে ধরে। মস্কোর দাবি, ন্যাটো অবশ্যই সোভিয়েত অঞ্চলের নতুন সদস্যদের স্বীকার করতে পারবে না এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ঘাঁটি গাড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুখ। আমরা যখন কথা বলতে বসব, রাশিয়া তার উদ্বেগগুলো তুলতে পারে এবং আমরা রাশিয়ার কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের উদ্বেগগুলো উত্থাপন করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের পর ১২ জানুয়ারি ন্যাটোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে মস্কো। এরপর ১ জানুয়ারি রাশিয়ার সঙ্গে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) নেতারা বৈঠক করবেন।
ইউক্রেন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা উত্তেজনার পর আলোচনার বিষয়টি সামনে এল। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন সীমান্তে লাখো সেনা জড়ো করার ও শীতে সেখানে আক্রমণ চালানোর অভিসন্ধির অভিযোগ তোলে ওয়াশিংটন।
আগামী ১০ জানুয়ারি বৈঠকটি গত জুনের শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেন এবং পুতিনের কৌশলগত নিরাপত্তা সংলাপের উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে।
হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আলোচনা বেশির ভাগই স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ঠিক করা হয়েছে। তবে দুই নেতার আলোচনা ইউক্রেন বিষয়টি নিয়েও গড়াতে পারে। ন্যাটোর সঙ্গে বৈঠকের মূল বিষয় হতে পারে ইউক্রেন।
রিয়াবকভ বলেছেন, মস্কো আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার নিরাপত্তার দাবির ওপর আলোকপাত হবে।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসকে রিয়াবকভ বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার প্রধান তারিখ হবে ১০ জানুয়ারি। সেদিন আমরা আশা রাখি, আমাদের আলোচনা খসড়া চুক্তিতে রূপান্তরিত হবে। অবশ্য এক দিনের আলোচনায় চুক্তিতে যাওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু আমরা বিষয়টিকে আরও টেনে নিতে চাই না। অন্য আরও জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে।’
ইউক্রেন মস্কোর প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে অবশেষে ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চাইছে।
রাশিয়া ইতিমধ্যে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে তার প্রতিবেশী একটি অংশ দখল করেছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে মস্কোপন্থী বিদ্রোহকে উসকে দেওয়ার জন্য অভিযোগ রয়েছে।
সীমান্তে রাশিয়ার কয়েক হাজার নতুন সৈন্য মোতায়েন কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের ভীতির জন্ম দিয়েছে। পুতিন প্রতিবেশী দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের সৈন্যের গতিবিধি পশ্চিমা সেনাবাহিনীর দখলদারত্বের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় অংশীদাররা। পাশাপাশি আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছে।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করা হবে না।