এত মুগ্ধতা গেল কোথায়

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস
ছবি: রয়টার্স

‘শুভ জন্মদিন মেলিন্ডা। আরও অনেক বছর এভাবে দুজন একসঙ্গে জীবনের তালে নাচতে চাই।’ ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে এই কথা লিখেছিলেন বিল গেটস। তারপর পাঁচ বছরও হয়নি। ২৭ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

শুধু পাঁচ বছর আগের ওই পোস্টই নয়। ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে মেলিন্ডার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে তাঁকে ভালোবাসা জানিয়েছিলেন বিল। তারপর পেরিয়েছে মাত্র এক বছর দু’মাসের কিছু বেশি সময়। এমন ভালোবাসার প্রকাশের পর এভাবে বিচ্ছেদে তাই অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, বিল-মেলিন্ডার পরস্পরের প্রতি এত মুগ্ধতা হঠাৎ গেল কোথায়?

দুজন ঘর বেঁধেছিলেন প্রেম করে। মেলিন্ডা ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দেন। একই বছর নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠানের এক নৈশভোজে মেলিন্ডা ও বিল গেটসের সাক্ষাৎ হয়। তারপর তাঁরা দীর্ঘদিন প্রেম করেন। ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান। মানবকল্যাণে দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন গেটস ফাউন্ডেশন। ২৭ বছরের এই একসঙ্গে পথচলার ইতি টানার এই হঠাৎ ঘোষণায় তাই অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন ঘুরছে

বিল ও মেলিন্ডা গত সোমবার টুইটারে বিবৃতি দিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার আগে কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, বিল-মেলিন্ডার সংসারে এমন ভাঙন আসতে পারে। সপ্তাহ দু-এক আগেও দুজনকে ভার্চ্যুয়াল সভায় একসঙ্গে দেখা গেছে। কিন্তু সোমবার টুইটারে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছেন এ জুটি। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। কোনো উপলক্ষ পেলেই পরস্পরকে ভালোবাসার কথা বলতেন। বলতেন আজীবন পাশে থাকার কথাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় বিল গেটসের নানা পোস্ট সে কথাই বলেন।

বিয়ে ও সংসার নিয়ে বরাবরই খুব ‘সিরিয়াস’ ছিলেন বিল গেটস। স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস ছিলেন তাঁর জীবনে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট’ জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, বিয়ে করা তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। আর মাইক্রোসফট তাঁর জীবনে বড় অবদান রাখলেও সেটির অবস্থান ২ নম্বরে।’

দুজনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েনের আভাস খুব বেশি পায়নি মানুষ। ২০১৭ সালে মেলিন্ডার জন্মদিন পালনে দুজনের হাসিখুশি ছবি পোস্ট করেছিলেন বিল গেটস। সেখানে তিনি মেলিন্ডাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, ‘তোমাকে পাশে পেয়ে আমি বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ।’

শুধু কি জন্মদিন! ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে প্রশংসা করতে ভোলেননি গেটস। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমি এই জীবনে এর চেয়ে ভালো সঙ্গী জন্য চাইতে পারি না।’

মা দিবসেও নিজের সন্তানের মাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন গেটস। ২০১৭ সালের ১৪ মে পরিবারের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘তোমার সঙ্গে পিতামাতা হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।’

২০১৯ সালে মেলিন্ডার জন্মদিনে বিল গেটস দুজনের কাছাকাছি থাকার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।’

মেলিন্ডার পছন্দে চলতেও পছন্দ করতেন বিল গেটস। গত বছরের ২২ মে বিল গেটস ফেসবুক পোস্টে লেখেন, মেলিন্ডা গেটস তাঁকে ‘দ্য চয়েস’ নামের একটি বই পড়তে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করেছেন।

২৭ বছর একে অন্যের হাতে হাত রেখে কাটানো জীবনে হঠাৎ ছেদ পড়ল। কেন হঠাৎ করে দুজন আলাদা হয়ে গেলেন? কেউ এখনো এ বিষয়ে কথা বলেননি।

গেটস দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বয়সে সবার বড় জেনিফার (২৫)। তাঁর ভাই রোরির বয়স ২২ বছর। আর ১৯ বছর বয়সী ফোয়েব সবার ছোট। জেনিফার বলেছেন, মা-বাবার বিচ্ছেদের ঘোষণায় পুরো পরিবার কঠিন সময় পার করছে।