গাড়ি কিনতে সাবধান

আমেরিকায় গাড়ি কিনতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ক্রেতাকে। নানা ফাঁক ফোকরে ভরা আমেরিকার গাড়ি বেচা কেনার বিষয়টি। অভিজ্ঞতা আর সতর্কতা না থাকলে অজান্তেই গচ্চা যাবে অনেকগুলো ডলার।

গাড়ি কেনার জন্য নগদ অর্থের সঙ্গে ব্যাংক ঋণ নিয়ে মালিকানা একটি প্রচলিত পদ্ধতি। যেভাবেই কেনা হোক, ডিলার থেকে পছন্দের গাড়িটির মূল্য নির্ধারণ করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। বাজারমূল্য যাচাই করে। মূল্য নির্ধারণ করার পর চূড়ান্ত চুক্তির আগে ব্যাংকের দেওয়া ঋণের বিষয়ে সবকিছু ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। গাড়ি ডিলারের বিক্রয় প্রতিনিধিরা পুরো দায়বদ্ধতা পর্যালোচনা না করেই বিক্রয় চুক্তিতে সাক্ষর করার তাগিদ দেবে, যা খুবই ক্ষতিকর। গাড়িটি পছন্দের পরেই জেনে নিতে হবে, গাড়িটির জন্য গৃহীত ঋণের পরিমাণ, সুদের হার, পরিশোধের সময়সীমাসহ সর্বমোট মূল্য কত হবে। ডিলাররা মাসিক লিজ ও সম্পূর্ণ বিক্রির ভিত্তিতে চুক্তি করে থাকে। লিজ নিয়মে গাড়ি ক্রয় করতে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত বড় বড় কোম্পানিতে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য লিজ ভিত্তিতে গাড়ি দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানির বাইরের ক্রেতাদের লিজের ভিত্তিতে গাড়ি কেনা সর্বক্ষেত্রে উচিত নয়। মাসিক লিজের ভিত্তিতে গাড়ি নিলে তা সাধারণত তিন বছর মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে হয়। এ তিন বছরের জন্য সীমিত মাইল গাড়ি চালানোর কথা উল্লেখ থাকে, যা হয়তো অনেকেই লিজ নেওয়ার চুক্তিতে উল্লেখিত শর্ত পড়েন না কিংবা জানেন না। নির্দিষ্ট বা বেঁধে দেওয়া মাইলের বেশি গাড়ি চালালে প্রতি মাইলে ১৫ থেকে ২০ সেন্ট করে মাশুল গুনতে হবে। তিন বছর পর গাড়ি ফেরত দেওয়ার সময় কয়েক হাজার ডলার অতিরিক্ত গুনতে হতে পারে। ওই পরিমাণ ডলার দিতে হবে, অথবা ওই গাড়িটি কিনে নিতে হবে। যার মূল্য বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি এবং সে জন্য ক্রেতাকে আবার নতুন করে ঋণের আওতায় আসতে হবে।

দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হলো, গাড়িটি সম্পূর্ণ কিনে নেওয়া। গাড়িটি কিনে নেওয়াই ভালো। গাড়ির ক্রয়মূল্যের ঋণ এবং ঋণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগে অথবা কোনো প্রকারের চুক্তিপত্রে সাক্ষর করার আগে বিক্রয় প্রতিনিধিকে জানাতে হবে স্পষ্টভাবে যে শুধুমাত্র গাড়ির নির্ধারিত মূল্য, মূল্যের ওপর কর ছাড়া আর কিছু দেওয়া হবে না। কারণ বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওই সময় না জানিয়ে বা পরামর্শ না করেই ঋণের অঙ্কের সঙ্গে আলাদা নানা ফি যুক্ত করতে পারে। এর জন্য দেখা যায় বাড়তি কয়েক শত ডলার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্রেতার অজান্তে বা অসতর্কতার কারণে। এ ধনের বাড়তি ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান থেকে সতর্কভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। এটা প্রতারণার আওতায় না পড়লেও ব্যবসায়িক কৌশলে গাড়ি ব্যবসায়ীরা আদায় করে নেয়। ঋণ ফি মূলত ঋণদাতার দেওয়ারই কথা।
পুরোনো গাড়ি ট্রেড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাড়ি ক্রয়ের জন্য গেলে আগের নম্বর প্লেট নতুন গাড়িতে ব্যবহার করা যায়। এ জন্য নতুন কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না। নতুন ক্রেতা হলে গাড়ি কেনার কাগজপত্র নিয়ে মোটর ভেইক্যাল অফিসে গেলেই ন্যূনতম ফি দিয়ে গাড়ির নম্বর প্লেট সংগ্রহ করা যায়। ডিলার তার নিজের স্বার্থে গাড়ির নম্বর প্লেট সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে চাইবে এবং এ বাবদ বাড়তি দুই/তিন শত ডলার দাবি করবে। ডিলারের সাহায্য না নিয়ে নিজেই তা করা যায় এবং এ কারণে অর্থের সাশ্রয় হয়। অনেকেই এ তথ্যটি না জানার কারণে গাড়ি ডিলাররা সুযোগ গ্রহণ করে থাকে।
ঋণের মাধ্যমে গাড়ি কিনলে আপনার গাড়ির যেকোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির (ফুল কভারেজ বিমা) নিশ্চিত করতে হয়। ডিলারের পরামর্শে আলাদা কোনো বিমা করা উচিত নয়। কারণ এ বাবদ দুই থেকে আড়াই হাজার ডলার মূল ঋণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। ক্রয় চুক্তি করার সময় গাড়ির ফরম পূরণের সময় গাড়ির মূল্য, ট্যাক্স এবং রেজিস্ট্রেশনের ফি ছাড়া অন্য কোনো কোনো খাতে যেন ব্যয় ধরা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সুনিশ্চিত না হলে ঋণপত্রে স্বাক্ষর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আমেরিকায় গাড়ি কেনার বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য অনেককেই মূল্য দিতে হয়েছে। ডিলারদের সঙ্গে বারগেন করার জন্য অভিজ্ঞতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করার কোনো বিকল্প নেই।