চীনকে আগ্রাসী ভূমিকা বন্ধ করতে হবে: ব্লিঙ্কেন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে অবশ্যই আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করতে হবে। আজ মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এক বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে সফর শুরু করেছেন ব্লিঙ্কেন। বিশেষত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা দূর করতে চান তিনি। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। ইন্দোনেশিয়ার পর মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ব্লিঙ্কেনের।
ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়ায় দেওয়া এক বক্তব্যে তাইওয়ান ও হংকংয়ের এখনকার পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করতে চায় ওয়াশিংটন। কেননা, প্রতি ভূখণ্ডের নিজেদের চলার পথ বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।’
এ সময় চীনের উদ্দেশে ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘দেশটি উন্মুক্ত সমুদ্রসীমা নিজেদের বলে দাবি করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোয় ভর্তুকি দিয়ে মুক্তবাজার ধ্বংস করছে। মতবিরোধ দেখা দিলেই যেকোনো দেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। আজ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে অশান্তি বিরাজ করছে। চীনকে এমন আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করতে হবে।’
ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে অবাধে চলাচল করার পক্ষে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রশাসন এই অঞ্চলে দ্বন্দ্ব চায় না। তাইওয়ানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’
জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং তাইওয়ান ও হংকংয়ে চীনা প্রভাব বিস্তার নিয়ে সাম্প্রতিক সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শীতল হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা দাবি করে বেইজিং। এটা নিয়ে এই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সঙ্গে চীনের বিরোধ রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে বাইডেন প্রশাসনকেও।
সম্প্রতি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চীনা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এই বিষয়ে আজ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ।’
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পড়েছে উভয়সংকটে। এক দিকে বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন, অপর দিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র—দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হচ্ছে দেশগুলোকে। একই সঙ্গে রাশিয়াও এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়াতে চাইছে। সব মিলিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়েছে এই অঞ্চলের দেশগুলো।