ট্রাম্প-বাইডেন মুখোমুখি হলে যে কথা হতে পারে

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন
ফাইল ছবি রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অন্যবারের চেয়ে অনেকটা আলাদা হিসেবে দেখা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের মহামারি বদলে দিয়েছে নির্বাচনী বিতর্কের বিষয় ও প্রচারণার ধরন। এবারের নির্বাচনে অর্থনীতির চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য ও বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয়গুলো। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ৯০ মিনিটের বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ওই বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের লাখো লাখো মানুষ প্রত্যক্ষ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্তমানে নির্বাচনের প্রধান আলোচ্যসূচির মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ। সদ্য প্রয়াত উদারপন্থী বিচারপতি রুথ বেইডার গিন্সবার্গের উত্তরসূরি হিসেবে গত শনিবার শিকাগোর আপিল আদালতের বিচারক অ্যামি কোনি ব্যারেটকে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। অনুমেয়ভাবেই বিষয়টি দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রথম বিতর্কের কেন্দ্রে থাকবে। বিতর্কে উপস্থাপনা করবেন ফক্স নিউজের উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস। বিতর্কে তিনি ট্রাম্প ও বাইডেনের অতীত রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন করে তাঁদের যোগ্যতা যাচাইয়ে ভুল করবেন না।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুই লাখের বেশি মানুষ। সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে ৭০ লাখের মতো। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ইতিমধ্যে করোনা মহামারির দায় চাপিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন করোনার ভয়াবহতাকে গুরুত্ব দেয়নি। হেলাফেলা করেছে। আর সে কারণেই এত প্রাণহানি ও সংক্রমণ।

করোনা সংক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি করুণ দশা। লাখ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি যে বিতর্কের বড় অংশ জুড়ে থাকবে, তা ধারণা করাই যায়।

পুলিশের হাতে একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে এত বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। বর্ণবৈষম্য ও সংঘাত থামাতে দুই প্রার্থী কী কী পদক্ষেপ নেবেন, তা বিশ্ববাসীকে জানানোর চেষ্টা করবেন উপস্থাপক ওয়ালেস।

এখন পর্যন্ত যেসব জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। জাতীয়ভাবে তো বটেই, সুইং স্টেটগুলোতেও (দোদুল্যমান ভোটারদের অঙ্গরাজ্য) জনসমর্থনে এগিয়ে বাইডেন। তবে ধীরে ধীরে ব্যবধান কমিয়ে আনছেন ট্রাম্প। তাই জনমত জরিপকে নিজের পক্ষে আনতে ট্রাম্প এই বিতর্ককে সুযোগ হিসেবে নিতে চাইবেন। নিজেকে দক্ষ বলে জাহির করা ও অগ্রহণযোগ্য বিতর্ক কৌশল গ্রহণের ইতিহাস রয়েছে ট্রাম্পের। সেসব কৌশল প্রয়োগ করেই বাইডেনকে ধরাশায়ী করার আশা করছেন ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর কংগ্রেসনাল ও প্রেসিডেনশিয়ালের পরিচালক ডেভিড বার্কার বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে বিতর্কে বাইডেনকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করবেন না ট্রাম্প।

তবে বাইডেনও কম যাবেন না। ট্রাম্পের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে ট্রাম্পকে প্রতিহত করার সুযোগ নিতে ছাড়বেন না বাইডেন। ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকান কৌশলবিদ স্টিভ শ্মিডট বলেছেন, গত চার বছরে ট্রাম্প যা যা করেছেন, তার হিসাব কড়াগণ্ডায় বুঝে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে এই বিতর্কের মঞ্চকে ব্যবহার করবেন বাইডেন।