নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে আইসবিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক ধরপাকড় চালায় পুলিশ
ছবি টুইটারের সৌজন্যে

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) পুলিশ বিলুপ্তির দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক নগরের টাইমস স্কয়ার ও ম্যানহাটনে নিউইয়র্ক পুলিশের বিভাগের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় পুলিশ অন্তত ৮৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে আইসের একটি আটক কেন্দ্রে আটক এক নারী অভিবাসীর ওপর অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। কয়েকটি ভিডিওর দৃশ্যে দেখা গেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছে।

টাইমস স্কয়ারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইসাবেলা লেভিয়ার টুইটারে এক বার্তায় বলেন, প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করা শুরু করে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় বেশ কিছু বিক্ষোভকারী বসেছিল। এ সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছিল। এক বিক্ষোভকারী চিৎকার করে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘আপনাদের সমস্যাটা কোথায়। তারা তো বসে আছে। তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

এনওয়াইপিডি সতর্কতা জারি করে এক বার্তায় বলেছে, ‘বিক্ষোভকারীরা বেআইনিভাবে সড়কে অবস্থান নিয়েছে এবং যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে।’

লেভিয়ার আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গিয়ে তাদের বাইসাইকেল রাস্তা থেকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছিল।

পুলিশ সূত্র জানায়, ওয়ান পুলিশ প্লাজার কাছে পার্ল ও ম্যাডিসন স্ট্রিট থেকে বিক্ষোভকারীদের দ্বিতীয় গ্রুপটি অবস্থান নিয়েছিল। সেখান থেকেও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুই জায়গায় আইসবিরোধী বিক্ষোভ থেকে মোট ৪১ জন পুরুষ ও ৪৫ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক সবার বিরুদ্ধে বেআইনি কর্মকাণ্ড ও গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাজে বাধার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে আইসকে কাজে লাগাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইসের কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যে নানা বিতর্ক উঠেছে। ট্রাম্পের জমানায় আমেরিকার সবচেয়ে সক্রিয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পরিণত হয়েছে এই সংস্থাটি। প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিতে একমাত্র আইস-ই আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সংস্থাটির অভিযান ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর আইসের গ্রেপ্তারের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের দেওয়া একের পর এক নির্বাহী আদেশ আইসের কার্যপরিধি ব্যাপকভাবে বাড়ান হয়েছে। জননিরাপত্তার কোনো হুমকি ছাড়াই স্বপ্রণোদিত অভিবাসনবিরোধী অভিযান তারা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সোৎসাহে অভিবাসী গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন অবৈধ অভিবাসীদের আইস কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎও হাতকড়া আর বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপে গিয়ে শেষ হচ্ছে।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রেটা সোটো মোরেনো নামের এক আশ্রয়প্রার্থী অভিযোগে বলেছিলেন, ‘আইসের কারাগার ও আটক কেন্দ্রগুলোর অবস্থা সাধারণ কারাগারের চেয়ে ভয়াবহ। তারা মনে করে অভিবাসী কিংবা শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করাই যায়। এর চেয়ে উন্নত পরিবেশ তাদের প্রাপ্য নয়। আর এটাকেই আইস বলে জিরো টলারেন্স নীতি।’

কোনো একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে বিমানবিকীকরণের এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে আইস। এই প্রচণ্ড ক্ষতিকর কাজটি সংঘটিত হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে। প্রেসিডেন্ট নিজেই আইসকে সব ধরনের নিপীড়ন চালানোর ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন। এই ছাড়পত্র হাতে নিয়ে আইস বিচার-বিবেচনা ছাড়াই প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পীড়নযন্ত্রে পরিণত হচ্ছে।