প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সরিয়ে নেবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার জাতিসংঘকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শর্তাবলি পরিবর্তন করলে আবার তারা এই চুক্তিতে ফিরে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে আবার এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল শনিবার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশ ওই চুক্তি সম্পাদন করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, প্রত্যাহারপ্রক্রিয়া চলাকালে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত তিন বছর লাগবে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র যে আর থাকছে না, সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জুনে ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপুল অঙ্কের খরচ বহন করতে হচ্ছে, দেশটিতে কর্মসংস্থান নষ্ট হয়েছে এবং তেল-গ্যাস-কয়লা ও উৎপাদনশিল্প পিছিয়ে পড়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার বলেছে, জলবায়ুনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রচেষ্টা সমর্থন করে যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা সহায়ক ব্যবস্থা থাকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মাসে প্যারিস সফরকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। সে সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, চুক্তির প্রতি মর্যাদা রেখেই কিছু একটা হতে পারে। দেখা যাক কী হয়।

তবে পররাষ্ট্র দপ্তর ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া সম্পর্কে বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১ জুনের ঘোষণায় যেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সেই অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র আবার প্যারিস চুক্তিতে ফিরতে পারে যদি শর্তগুলো দেশের ব্যবসা, শ্রমিক ও করদাতাদের অনুকূলে থাকে।

মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, এটা ওবামা প্রশাসন অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানের যে অবমূল্যায়ন করেছিল এটা তার ওপর আরেকটি আঘাত।

তবে ব্যবসায়িক নেতাদের অনেকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ওপর একটা বড় আঘাত। আর এটা পরিবেশবান্ধব জ্বালানিশিল্প বিকাশের একটা সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি কমানোর লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোপুরি বেরিয়ে যেতে কমপক্ষে ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সময় দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে।