প্রণোদনার পরও করোনায় সংকটে কর্মজীবী পরিবার

একাধিক নাগরিক প্রণোদনা পাওয়ার পরও ভালো নেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীরা। ইতিহাসের নজিরবিহীন সংকটে পড়া মার্কিন সমাজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক বছরে তিনটি নাগরিক প্রণোদনার মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। ১৫ কোটি মার্কিন কর্মজীবীই দেশটির সমাজ ও অর্থনীতিকে চাঞ্চল্য ধরে রাখে। করোনা অতিমারির কারণে এই কর্মজীবী গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

২০২০ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯–এর ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হলে অধিকাংশ কর্মজীবীই হঠাৎই কর্মহীন হয়ে পড়ে। একের পর এক নাগরিক প্রণোদনা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। সরকারি হিসাবে থাকা কর্মজীবীদের মধ্যে এখনো দুই কোটির বেশি মানুষ কর্মহীন। ব্যাপক এই

জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না আসলে মার্কিন সমাজ ও অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য আসবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোভিড-১৯ মোকাবিলা করাসহ অর্থনীতিতে দ্রুত চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘আমেরিকা পুনরুদ্ধার আইন’ নামে নতুন নাগরিক প্রণোদনা কংগ্রেসে পাস হওয়ার পর তিনি এ কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বারবারই বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছেন।

বেকারভাতা পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষই এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে। আবাসন, খাবার, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রায় দুই কোটি বেকার কর্মজীবীকে।

১০ মার্চ মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত তথ্যে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। গত এক বছর ধরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বেকার হয়ে পড়া মার্কিন জনগোষ্ঠীর ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। রক্ষণশীল ও উচ্চ আয়ের মানুষ বিতর্ক করে আসছিলেন, কর্মজীবীদের উদারভাবে বেকার ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমে নিয়মিত বেকারভাতার অতিরিক্ত সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে দেওয়া হয়েছে। এখনো বেকার থাকা লোকজনকে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত বেকারভাতার অতিরিক্ত সপ্তাহে ৩০০ ডলার। কংগ্রেসে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আসছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেকার ভাতার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কর্মজীবীদের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ গত ফেব্রুয়ারির ৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত জরিপটি পরিচালনা করে।

প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার জানিয়েছে, জরিপ পরিচালনার সপ্তাহে পাওয়া ভাতা তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যবহার করতে হচ্ছে। এসব পরিবারের হাতে কোনো সঞ্চয় নেই এবং বেকার ভাতার পরের সপ্তাহের অর্থ না পেলে তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় কাটাতে হবে।

কমপক্ষে ১ কোটি ৮০ লাখ কর্মজীবীকে প্রতি সপ্তাহে বেকার ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কর্মহীনদের জন্য রাজ্য বিমা তহবিলের বাইরে ফেডারেল তহবিল থেকেও এই অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ অবিনাশ মোহান্তে বলেছেন, জরিপের আওতায় আসা পরিবারগুলোর ৩১ শতাংশের বেশি জানিয়েছে, নিত্যদিনের ব্যয় নির্বাহের জন্য তারা বেকারভাতার ওপর নির্ভরশীল। নিত্যদিনের ব্যয় নির্বাহের আওতায় খাবার, বাসা ভাড়া, গৃহঋণের কিস্তি, গাড়ি কেনার কিস্তি, চিকিৎসা ব্যয় এবং শিক্ষাঋণের কিস্তি পরিশোধের মতো অপরিহার্য ব্যয়কে হিসাবে ধরা হয়েছে।

বেকারভাতা না পাওয়া মার্কিন কর্মজীবীদের ১২ শতাংশও একই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। বেকারভাতার ওপর নির্ভরশীল ছয়টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার বলেছে, বাসা ভাড়া না দেওয়ার কারণে তারা দু–এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

বেকারভাতা গ্রহণকারী ১৬ শতাংশ পরিবার, যাদের গৃহঋণ বা বাসা ভাড়ার দায় রয়েছে— তাদের অবস্থা আরও নাজুক। তারা পরের মাসে বাসা ভাড়া বা গৃহঋণের কিস্তি দিতে পারবে কিনা, এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছে।

কর্মজীবীদের মধ্যে বেকারভাতা গ্রহীতার ৭৫ শতাংশই জানিয়েছে, তাঁদের শিশু সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে। ফুড স্ট্যাম্প বা খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকার পরও জরিপের আওতায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মজীবী পরিবার জানিয়েছে, কোনো কোনো সময় বা প্রায়ই তাদের পরিবার পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মার্কিন সমাজের মধ্যবিত্তরা ব্যাপকভাবে ভোগবাদী। উচ্চমানের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মার্কিন কর্মজীবী মধ্যবিত্তদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনমানসিকতা খুবই কম। কর্মসংস্থান ও উপার্জনের নিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করায় ভিন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত মার্কিন সমাজ। কোভিড-১৯ এই অভ্যাসের ওপর বিরাট চাপ এনে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন পুরোদমে চালু না হওয়া পর্যন্ত কর্মজীবীদের সংকট থেকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।