প্রবাসে দেশের ঈদের আমেজ

কোরবানির পশু কেনার সঙ্গে সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি ট্যাগ
কোরবানির পশু কেনার সঙ্গে সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি ট্যাগ

ঈদ মানে খুশি আর আনন্দ। বিদেশের মাটিতে যদি দেশের ঈদের আমেজ পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। ঈদের নামাজ শেষে গরু-ছাগল জবাই, মাংস বিলি ও রান্না-খাওয়ায় উৎসবের আমেজে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করেন মুসলমানরা। প্রবাসীরাও এই কোরবানি ঈদ উদ্‌যাপন করেন। তবে আমাদের কোরবানি ঈদ হয় একটু ভিন্নভাবে।
নিউইয়র্কে আসার পর থেকে কোরবানির গরু বা ছাগল চোখে দেখিনি। ঈদের দিন শেষে রাতে বা পরের দিন কোরবানির মাংস নিয়ে এসেছি গ্রোসারি থেকে। এবার কোরবানি ঈদ ছিল একটু ভিন্ন রকমের। নিউইয়র্ক ছেড়ে ওয়াশিংটন ভার্জিনিয়ায় ভাইয়ের বাসায় ঈদ করতে গিয়েছিলাম। গ্রীষ্মের ছুটিতে ঈদ হওয়ায় এবার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। গ্রোসারিতে নয়, খামারে গিয়ে পছন্দমতো কোরবানির গরু কিনে রেখে আসে ভাইয়া। বাংলাদেশের মতো বাসায় আনা হয়নি। কারণ, এখানে খামারেই কোরবানি করা নিয়ম। সেখানে গরুর গায়ে একটা ট্যাগ লাগিয়ে রাখা হয়।

খামারে কোরবানির পশুর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে শিশুরা
খামারে কোরবানির পশুর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে শিশুরা

ঈদের দিন নামাজ শেষে আমরা সবাই খামারে গেলাম। সে এক বিশাল আয়োজন। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা কোরবানি দিয়েছেন, সবাই সেখানে সেজেগুজে হাজির। সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে নানা ধরনের মজার খাবার। দেশি-বিদেশি সবাই তাদের মতো করে সেজে এসেছে। যার যার দেশের খাবারও এনেছে সঙ্গে। কেউ কেউ এখানে এসেই রান্না করে খাচ্ছে।
চারদিকে ঈদের আমেজ। সবাইকে এক বিশাল পরিবার মনে হচ্ছিল। আমাদের দেশে সাত আটজন মিলে গরুকে কেবলামুখী করে শুইয়ে জবাই করে। এখানে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। গরুটাকে একটা বক্সের মতো ঘরে নিল। মাথাটা বের করে রাখা হলো। নাকটাকে একটা আংটা দিয়ে টেনে কিছুটা ওপরের দিকে করে রাখা হলো। তারপর দোয়া পড়ে ছুরি চালানো হলো। অনেকক্ষণ গরুর নিথর মাথার দিকে চোখ আটকে থাকল। সব দেশের কসাইদের ধর্ম মনে হয় এক। কাজের সময় হয় তাদের ডিমান্ড বেড়ে যায়, না হয় কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এখানেও তাই দেখলাম। অনেক বেশি টাকায় পরে ঠিক করা হলো এক কসাইকে। ছেলেরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল মাংস কাটা নিয়ে। আর আমরা বের হলাম ঘুরতে। এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে। চারদিকে গরু ছাগল, ভেড়ার মাংসের ভিড় দেখতে পাচ্ছিলাম। এখানে কাউকে চিনি না। তারপরও সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে আনন্দে শামিল হতে আহ্বান জানালেন। নিজেদের দেশজ খাবার দিয়ে করলেন আপ্যায়ন। ঈদের আনন্দ যেন সবারই চোখে-মুখে। আমাদের পাশের তাঁবুতে যারা ছিলেন, তাঁরা বেশ কয়েকটি পরিবার একসঙ্গে এসেছেন। কেউ কেউ নিউইয়র্ক থেকেও গিয়েছেন আমার মতো।
বয়স্করা বসে আছেন, বাচ্চারা যে যার মতো খেলছে। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত মাংস কাটায়। সবকিছু মিলে বেশ আনন্দে কেটেছে কোরবানির ঈদ। বিদেশের মাটিতে দেশীয় আমেজে ঈদ সত্যি এক ভিন্ন অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।