প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল লড়াই হবে ফ্লোরিডায়
রোমান্টিক কমেডি হিসেবে ‘অল রোডস লিড টু রোম’ যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেখানে পরিণত ভালোবাসার নগরী হিসেবে রোমকে দেখানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘অল ইলেকশনস লিড টু ফ্লোরিডা’ হয়ে উঠেছে। আসছে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ের দৃশ্যত মাঠ এখন ফ্লোরিডা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিণতির জন্য এ রাজ্যটি এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে না থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আসছে নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। অবশ্য ফ্লোরিডা রাজ্যের ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট তাঁর লাগবেই। ইলেকটোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ী হওয়ার একাধিক পথ রয়েছে। ট্রাম্পকে বিজয়ের জন্য ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের জন্য ফ্লোরিডায় জয়ী হতেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। এ রাজ্যের জন মিশ্রণ বৈচিত্র্যময়। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বহু শ্বেতাঙ্গ লোকজন অবসরের জীবনে ছুটে গেছেন ফ্লোরিডায় বসবাসের জন্য। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি এলাকার অনেক মানুষ এখন ফ্লোরিডার বাসিন্দা। এঁরা বয়সে প্রবীণ।
জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে না থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আসছে নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। অবশ্য ফ্লোরিডা রাজ্যের ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট তাঁর লাগবেই। ইলেকটোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ী হওয়ার একাধিক পথ রয়েছে। ট্রাম্পকে বিজয়ের জন্য ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের জন্য ফ্লোরিডায় জয়ী হতেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে আইনগতভাবে নিউইয়র্কের বাসিন্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। ট্রাম্প এর মধ্যেই তাঁর বাসস্থান আইনগতভাবে পরিবর্তন করেছেন। ফ্লোরিডায় তাঁর অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়ী স্থাপনা আছে। নিজেকে এখন ফ্লোরিডার বাসিন্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ফেলেছেন তিনি।
ফ্লোরিডার শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের কাছে এখনো জো বাইডেন জনমতে এগিয়ে আছেন। যদিও ব্যবধান খুবই অল্প। ফ্লোরিডায় উল্লেখযোগ্য ভোটার কিউবান এবং নন কিউবান হিস্পানিক। এসব ভোটারদের কাছে জো বাইডেনের বার্তা সঠিকভাবে যায়নি বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ কাজে এগিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনকুবের ও নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ।
ব্লুমবার্গ নিজেও ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চেয়েছিলেন। প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের অর্থ ব্যয় করে প্রাইমারি থেকেই তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়। এবারে ঘোষণা দিয়েছেন, ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ফ্লোরিডায় জো বাইডেনের প্রচারের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবেন মাইকেল ব্লুমবার্গ।
মাইকেল ব্লুমবার্গের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কেভিন সিকেই বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর জন্য ব্লুমবার্গ বাইডেনকে সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছেন। জো বাইডেনের প্রচার তহবিলের অর্থ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যের প্রচারে ব্যয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফ্লোরিডা এখন দুই প্রার্থীর প্রচারর জমে উঠেছে। স্থানীয় সব রেডিও-টিভির বিজ্ঞাপন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। প্রাইম টাইমের টিভি বিজ্ঞাপনে প্রতি ৩০ সেকেন্ডের জন্য ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলার হাঁকা হচ্ছে ফ্লোরিডায়। ব্যয়বহুল এ প্রচারে ব্লুমবার্গ নিজের অর্থ অনুদান দিচ্ছেন। ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক মাইকেল ব্লুমবার্গের এ ১০০ মিলিয়ন ডলার হিস্পানিক ভোটারদের লক্ষ্য করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ডেমোক্রেটিক প্রচার শিবির। হিস্পানিক রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রে এখন জো বাইডেনের প্রচার শুরু হয়েছে। যে কাজটি ট্রাম্পের প্রচার থেকে বেশ আগেই ভাগেই করা হচ্ছে।
মাইকেল ব্লুমবার্গের এ বিপুল অর্থ অনুদানের ঘোষণা শুনে চটেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্বভাব অনুযায়ী বিদ্রূপ করে বলেছেন, দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যে লোক দলের প্রাইমারিতে হেরেছেন, তাঁকে তো সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এক প্রশ্ন করেই রাজনীতি থেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন।
দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যে লোক দলের প্রাইমারিতে হেরেছেন, তাঁকে তো সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এক প্রশ্ন করেই রাজনীতি থেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন
ফ্লোরিডায় জয় পাওয়া জো বাইডেনের জন্যও জরুরি। ফ্লোরিডা রাজ্যে ডাকযোগে পাওয়া ভোট বা আগাম ভোট নির্বাচনের রাতেই গণনা করে ফল দেওয়া হয়। অন্য রাজ্যে ডাকযোগে পাওয়া ভোটের গণনায় বিলম্বের কারণে ভোটের দিনের রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেঁকে বসতে পারেন। ফ্লোরিডা রাজ্য ডাকযোগে ভোট, আগাম ভোট আগেই গণনা করা রাখা হয়। ডাকযোগে ভোটের বিতর্ক এড়াতেও ফ্লোরিডাতে পরিষ্কার জিতে আসা জো বাইডেনের জন্য জরুরি বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদেরা।
২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজ্য সরকার ও কংগ্রেসের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়জয়কার থাকলেও ফ্লোরিডায় ডেমোক্রেটিক দল হেরেছে
ফ্লোরিডা সাম্প্রতিক সব নির্বাচনেই রহস্যজনক আচরণ করে আসছে। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজ্য সরকার ও কংগ্রেসের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়জয়কার থাকলেও ফ্লোরিডায় ডেমোক্রেটিক দল হেরেছে। ট্রাম্প শিবির থেকে বলা হচ্ছে, তাঁরা মনে করেন ফ্লোরিডা ট্রাম্পকে বিমুখ করবে না। তাঁরা নিশ্চিত জয় পাবেন।
ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, ব্লুমবার্গের অনুদানের অর্থ অনেক কাজে লাগবে। আসছে দেড় মাস ব্যাপকভাবে প্রচারে ব্যয় করতে পারলে হিস্পানিক ভোটারদের উদ্দীপ্ত করা যাবে। সে ক্ষেত্রে জো বাইডেন সহজেই জয় পাবেন এবং ‘সানশাইন রাজ্য’ নামে ফ্লোরিডাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্ধকার দেখবেন। তাঁর হোয়াইট হাউসে আরও চার বছর বসবাসের স্বপ্ন ফ্লোরিডাতেই ভঙ্গ হয়ে যাবে।