বাইডেনের সামনে ‘অগ্নিপরীক্ষা’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে ‘অগ্নিপরীক্ষা’। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি তাঁর ও ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণী হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের সফলতা আগামী সপ্তাহে ক্যাপিটল হিলে নির্ধারিত হতে পারে। এ অবস্থায় বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি ও রক্ষণশীল আমেরিকানরা বাইডেনের সম্ভাব্য ব্যর্থতার হিসাব কষার জন্য অপেক্ষায় আছে।

আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে বাইডেনের বহুল আলোচিত পরিকাঠামো আইন প্রস্তাব। ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের এ প্রস্তাব নিয়ে এখন বেঁকে বসেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টিরই কিছু আইনপ্রণেতা। এ নিয়ে হোয়াইট হাউস ও ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে চলছে উত্তেজনা।

মার্কিন সিনেটে এ আইন প্রস্তাব পাস হয়ে আছে। সমঝোতা অনুযায়ী ১৯ জন রিপাবলিকান সিনেটর আইন প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সিনেটে আইন প্রস্তাবটি পাস করানোর জন্য ব্যাপক সমঝোতা করতে হয়েছে। সিনেটে সমান সমান অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি।

পরিকাঠামো আইন প্রস্তাবটি ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিনিধি পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এ কথা জানিয়েছেন।

প্রতিনিধি পরিষদে সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক পার্টি। কিন্তু আইন প্রস্তাবটি নিয়ে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক আইনপ্রণেতারা ইতিমধ্যে বেঁকে বসেছেন। তাঁরা বলছেন, পৃথক একটি ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের আইন প্রস্তাব আগে পাস করতে হবে। কেবল তা হলেই তাঁরা পরিকাঠামো আইন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন।

৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয়বহুল আইন প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সব প্রতিশ্রুতি-কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইন প্রস্তাবে অভিবাসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নানা কর্মসূচিসহ আমেরিকার ইতিহাসের যুগান্তকারী সব উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়গুলো যুক্ত করা আছে।

প্রতিনিধি পরিষদের উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও, প্রমিলা জয়পালসহ অন্যরা আগে ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের আইন প্রস্তাবটি নিয়ে সমঝোতা চান। এ জন্য এখন তাঁরা চাপ দিচ্ছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক আইনপ্রণেতারা মনে করছেন, চাপে ফেলে ব্যয়বহুল আইন প্রস্তাবটি আগে পাস করানো না গেলে পরে সেটিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যপন্থী ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা ফেলে রাখবেন।

৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের আইন প্রস্তাবটি নিয়ে সমঝোতা করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। সিনেটে দুই পার্টির ৫০-৫০ বিভক্তির মধ্যে ডেমোক্রিটক পার্টির সিনেটর ক্রিস্টেন সিনেমা ও জো মানচিন বলে দিয়েছেন, তাঁরা এই ব্যয়বহুল আইন প্রস্তাবের পক্ষে নেই।

অপর দিকে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ অন্য উদারনৈতিক আইনপ্রণেতারা মনে করছেন, এবারই তাঁদের সামনে শেষ সুযোগ। এবার যদি নিজেদের কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যয়বহুল এই আইন প্রস্তাব তাঁরা গ্রহণ করাতে না পারেন, তাহলে আর কখনোই পারবেন না।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য এ নিয়ে সমঝোতা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির সময় পেরিয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আশা দেখান। করোনা মহামারি ও দেশের চলমান বাস্তবতায় বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের স্বপ্ন দেখান। সে অনুযায়ী তিনি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, প্রজন্মের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে আমেরিকায়। সে জন্য ইতিহাসের বৃহত্তম সরকারি বিনিয়োগ করা হবে।

বাইডেন এমন বড় উদ্যোগ নিয়ে রাজনৈতিক বাজি ধরেছেন। মার্কিন সমাজে সরকারের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় বলা হয়েছিল, আমেরিকায় জনগণের ওপর সরকারের আধিপত্য কমে আসছে। তা অর্জিত না হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আমেরিকার জনগণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টতা বাড়বে।

সিএনএন এক বিশ্লেষণে বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর সব উন্নয়ন ও সংস্কার পরিকল্পনাকে এখন মাত্র দুটি আইন প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছেন। তাঁর ও ডেমোক্র্যাটদের কাছে কোনো বিকল্প উপায় রাখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এই দুটি আইন প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা না গেলে বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টি হোঁচট খাবে। ব্যর্থ হলে নিজেদের কর্মসূচি কীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, তার কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত বাইডেনের কাছে নেই।

বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের কাছে সময় খুব কম। মার্কিন রাজনীতির ইতিহাস ও জনমত জরিপে আস্থা রাখলে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের নিয়ন্ত্রণ একসঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। রিপাবলিকান পার্টি কালক্ষেপণ করে আগামী কয়েক সপ্তাহ আইন প্রস্তাবগুলো ঠেকিয়ে দিতে পারলে বাইডেনের জন্য বিপদ চরমে উঠবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এবার না পারলে ২০২৪ সালের মেয়াদ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আর কোনো বড় আইন প্রস্তাব নিয়ে সমঝোতা করতে পারার সম্ভাবনা কম।

সিএনএন বলছে, ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে তারা দলের কর্মসূচিগুলো আর বাস্তবায়িত করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে ২০২৪ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হতে পারে। ফলে বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য আগামী সপ্তাহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।