বেজোসের সঙ্গী দুই রেকর্ড

মহাকাশযানের ক্রু ক্যাপসুলের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জেফ বেজোস।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ব্যস্ততার ফাঁকে অবসর পাওয়া গেলেই অনেকে ছোটেন প্রকৃতির কাছে। কেউবা ছোটেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা কোনো স্থান বা স্থাপনা দর্শনে, কিংবা কোনো দ্বীপে। মানুষের এই পর্যটন মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত করতে অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারই ধারায় গত সপ্তাহে মহাশূন্যের সীমান্ত ছুঁয়ে এসেছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন। আর চলতি সপ্তাহে মহাকাশ ভ্রমণ করার কথা রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের। তাঁর সহযাত্রী হয়ে কনিষ্ঠতম মহাকাশচারী হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাতে চলেছেন ১৮ বছর বয়সী অলিভার ডায়মেন।

বেজোসের মহাকাশ ভ্রমণে যাওয়ার কথা ২০ জুলাই। তাঁর সহযাত্রী হবেন তাঁর ভাই মার্ক, ৮২ বছর বয়সী উইলি ফাঙ্ক এবং অলিভার ডায়মেন। এই অভিযানে অলিভারের পাশাপাশি উইলি ফাঙ্কও রেকর্ড গড়তে চলেছেন। কারণ, সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হলে তিনি হবেন বিশ্বের প্রবীণতম মহাকাশ পর্যটক।

অলিভারের এই মহাকাশযাত্রা অনেকটা নাটকীয়ই বলতে হবে। কারণ, বেজোসের সঙ্গে মহাকাশ ভ্রমণে যাওয়ার কথা ছিল অন্য একজনের। নিলামে তিনি ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারে বেজোসের পাশের আসনটি জিতে নেন। কিন্তু সময়সূচির জটিলতায় ওই ব্যক্তি বেজোসের সহযাত্রী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এরপরই তড়িঘড়ি ঘোষণা করা হয় অলিভারের নাম। বিবিসি জানায়, মহাকাশে মানুষ পরিবহনে বেজোসের মালিকানাধীন ব্লু অরিজিনের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নাম লিখিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ কোম্পানি সমারসেট ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়েস ডায়মেন।

ব্লু অরিজিন এক বিবৃতিতে বলেছে, বেজোসের সহযাত্রী হতে নিলামে বিজয়ী অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি নিজের নাম প্রত্যাহার করার পর জয়েস ডায়মেনকে প্রথম ফ্লাইটের জন্য বাছাই করা হয়। তবে তিনি নিজে অংশ না নিয়ে তাঁর ছেলে অলিভারের নাম প্রস্তাব করেন। এএফপি জানায়, অলিভার আগামী সেপ্টেম্বরে নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব ইউট্রেখটে পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভাবন ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেসরকারি উড়োজাহাজ ওড়ানোর লাইসেন্স রয়েছে তাঁর।

ব্লু অরিজিন বলেছে, বেজোসকে বহনকারী মহাকাশযানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত যাবে। এরপর কিছু সময় বেজোস ও তাঁর তিন সহযাত্রী মহাশূন্যে ওজনহীনতা অনুভব করবেন। পরে তাঁদের বহনকারী ক্যাপসুলটি প্যারাসুটে করে পৃথিবীতে ফিরবে।

এর আগে ১১ জুলাই মহাশূন্যের প্রান্ত ছুঁয়ে আসেন ৭০ বছর বয়সী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন। তাঁর মালিকানাধীন মার্কিন কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশ উৎক্ষেপণ ছিল সেটি। মহাকাশযানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার ওপরে উঠে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। পুরো অভিযান সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।

তবে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন কিন্তু বিশ্বের প্রথম মহাকাশ পর্যটক নন। বিশ্বের প্রথম মহাকাশ পর্যটক হিসেবে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ইতিহাসে নাম লেখান মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটো। তিনি রাশিয়ার মহাকাশযান সয়ুজে চেপে সেদিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইসিসি) পা রেখেছিলেন। এরপর সাতজন ব্যক্তি মহাকাশ ঘুরে এসেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন ও জেফ বেজোস মিলে যে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন, তা মহাকাশ পর্যটনের দুয়ার খুলে দেবে। এ ছাড়া ইলন মাস্কও মহাকাশ পর্যটন নিয়ে কাজ করছেন।

অলিভার ডায়মেন।
ছবি: ব্লু অরিজিন

তবে মহাকাশ পর্যটনের দুয়ার খুললেও ধনকুবের ছাড়া আপাতত আর কারও এ ক্ষেত্রে আশার কিছু নেই। সিএনএনের এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের প্রথম মহাকাশ পর্যটক ডেনিস টিটো ২ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা) খরচ করে তাঁর স্বপ্ন সত্যি করেছিলেন। মহাকাশ পর্যটন কবে নাগাদ সাধারণের নাগালে আসবে, সে বিষয়েও ধারণা দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে মহাকাশ গবেষণাবিষয়ক মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রালিটিক্যালের মালিক লরা ফোর্সজিক সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্রথম দিকে উড়োজাহাজে একসঙ্গে খুব কমসংখ্যক মানুষ ভ্রমণ করতে পারত। সে সময় আকাশ ভ্রমণের ব্যয় ছিল আকাশচুম্বী। কল্পনা করুন, আজও যদি উড়োজাহাজগুলো ওই অল্পসংখ্যক মানুষই পরিবহন করত, তাহলে ভ্রমণের ব্যয় এখনো নাগালের বাইরেই থাকত।’ তাঁর মতে, মহাকাশ পর্যটনের ব্যয়ও কমবে, যদি একসঙ্গে বেশিসংখ্যক মানুষ পরিবহন করা যায়।