মহামারিতেও বেড়েছে সামরিক ব্যয়

গত বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

  • বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আর ১৩ শতাংশ হয়েছে চীনে।

  • ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি করোনা মোকাবিলায় প্রণোদনার অংশ দিয়ে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে।

  • ২০০৮–২০০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নিলেও এবার সেই পথে হাঁটেনি অনেকে।

রয়টার্স

করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হলেও বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। গতকাল সোমবার সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

এসআইপিআরআইয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওই বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকদের একজন ডিয়োগে লোপেজ ডি সিলভা। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনীতির করুণদশার মধ্যেও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তিনি বলেন, মহামারির কারণে এবার সামরিক ব্যয় কমার কথা ছিল। মানুষ সেটাই মনে করত। কিন্তু ২০২০ সালে সামরিক খাতের ব্যয় কমানোর বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার অর্থ হচ্ছে জিডিপিতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং অন্যান্য খাতের ব্যয় কমানো। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যের বেশির ভাগ দেশ নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে তাদের সামরিক ব্যয়ের অন্তত ২ শতাংশ বাড়িয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৯টি দেশ সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছিল, সেখানে ২০২০ সালে বাড়িয়েছে ১২টি দেশ। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি, এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া মহামারি মোকাবিলার কথা বলে সরাসরি সামরিক ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

লোপেজ বলেন, ব্রাজিল ও রাশিয়ার মতো অন্যান্য দেশ করোনার কারণে অর্থ বরাদ্দ পুনর্বণ্টন করলেও তা তারা স্পষ্ট করে জানায়নি। কিন্তু দেশগুলো ২০২০ সালের প্রকৃত বাজেটের চেয়ে তুলনামূলক কম অর্থ ব্যবহার করেছে।

ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। দেশটি করোনা মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে।

লোপেজ বলেছেন, ২০০৮–০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অনেক দেশ কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নিয়েছিল। কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।

২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ে চীনের একটি শহরে। পরে করোনার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের এই দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় করেছে মহামারির মধ্যেও। বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আর ১৩ শতাংশ হয়েছে চীনে। অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে চীন। দেশটিতে টানা ২৬ বছর ধরে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। ২০২০ সালে দেশটির সামরিক ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রও ২০১৭ সাল থেকে টানা তিন বছরের মতো সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। যদিও এর আগের ৭ বছর এই ব্যয় কমিয়েছিল দেশটি।

গবেষণা প্রতিবেদনের আরেক লেখক আলেক্সজান্দ্রা মার্কস্টেইনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ শক্তিশালী দেশগুলো থেকে সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে উদ্বেগ এবং সেনাবাহিনীকে শক্তিশালীকরণে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে গত বছরের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে।

লোপেজ বলেছেন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দেশটির সামরিক ব্যয় বাড়াবে কি না, সেই ব্যাপারে এখনো কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে সাত বছর সামরিক ব্যয় কমে, সেই সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। তাঁরই ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এখন দেখার বিষয়, তিনি বিষয়টিতে কোন পথে হাঁটেন।