করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যসেবীরা বলছেন, সম্ভাব্য এ মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, আমেরিকার করোনা পরিস্থিতির পুরোটাই অনুমেয় এবং পুরোটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশের এখনো ৮ কোটি মানুষ টিকা গ্রহণ করেনি। টিকা গ্রহণ না করা লোকজনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে এখন এক লাখের বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী। এসব রোগীদের অধিকাংশই টিকা না নেওয়ার দলে।

অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, আমরা এই পরিস্থিতিকে ঘুরিয়ে দিতে পারি। যেসব লোকজন এখনো টিকা গ্রহণ করেনি, তাদের টিকা প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সৃষ্টি করতে পারলেই মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন তাদের নিজস্ব মডেলে প্রকাশ করা ধারণাপত্রে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের চলমান হার অব্যাহত থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে।

অ্যান্থনি ফাউসি সিএনএনকে বলেছেন, কোনো প্রকার আদর্শিক বা রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়ে জীবন রক্ষার জন্য টিকা গ্রহণ করার মাধ্যমেই এমন বহু মৃত্যুকে ঠেকানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র টিকা সহজলভ্য হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন এখনো টিকা নেয়নি। ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়। মহামারির উৎপত্তি, এর ছড়িয়ে পড়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সাংঘর্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকলে এ নিয়ে সন্দেহ জোরদার হয়।

মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য সতর্কতা অবলম্বনের মতো স্বাভাবিক পদক্ষেপকেও রাজনৈতিক বিতর্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ তাঁর অনুসারীদের মাস্ক পরার বিষয়ে অনীহা দেখা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নির্বাচনে বহু প্রচারণা সভায় মাস্কবিহীন সমাবেশ করেছেন। তিনি নিজেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হলেও এ নিয়ে বিতর্ক থামেনি।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো প্রতিদিন গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় লাখ লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। ডেলটা ভাইরাসের এ সংক্রমণ অনেক বেশি ছোঁয়াচে বলে স্বাস্থ্যসেবীরা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন অল্প বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটছে।

স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা প্রদান বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এর মধ্যে যারা পূর্ণ ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।

অ্যান্থনি ফাউসি জানিয়েছেন, আসছে ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুস্টার ডোজ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।