সিটি নির্বাচনে উদাসীনতা কেন?

noname
noname

নিউইয়র্কের সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার। নির্বাচন নিয়ে জ্যাকসন হাইটসের ১০ জন সাধারন বাঙালিকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো মেয়র পদে বিল ডি ব্লাজিওর প্রতিদ্বন্দ্বী কারা? এ প্রশ্নের উত্তরে ব্লাজিওর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী নিকোল মাল্লিওতাকিসের নামটিও কেউ বলতে পারেননি। অন্য পাঁচ প্রার্থীর কথা বাদই দিলাম। সবাই বলেছেন, ‘ব্লাজিও ছাড়া কাউকে চিনি না।’ নিজের ডিস্ট্রিকের কাউন্সিল মেম্বার কে তাঁর নামও জানেন না কমিউনিটির অধিকাংশ লোকজন। নির্বাচন নিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিদের অবস্থান জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেন, এ নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নেওয়া একজন প্রার্থী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

নিউইয়র্ক সিটির নাগরিকেরা প্রতি চার বছর পর একজন মেয়র নির্বাচন করেন। মেয়রসহ ৫১ সদস্য নিয়ে কাউন্সিল গঠিত হয়। নিজেদের দলের ভেতরে প্রার্থী বাচাইয়ের জন্য যে নির্বাচন তাকে প্রাথমিক নির্বাচন বলে। দুই দল থেকে দুজন বিজয়ী পরে চূড়ান্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছেন বাঙালি কমিউনিটির শেখ হেলাল। নির্বাচনী প্রচারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হেলাল বলেন, প্রত্যেক বাঙালি মনেপ্রাণে চেয়েছেন যেন আমি নির্বাচনে পাস করি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগ এখনো নিজেদের এই রাষ্ট্রের পূর্ণ নাগরিক মনে করেন না। তাঁদের ধারণা এসব নির্বাচনে অংশগ্রহন করা আমাদের কাজ নয়। এই মনোভাব থেকেই তারা আমেরিকার যেকোনো নির্বাচন নিয়ে অসচেতন বা অনাগ্রহী।

হেলাল আরও বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় বাঙালি তেমন একটা ছিলেন না। তারপরও স্থানীয় টিভি এবং পত্রিকায় আমার বিজ্ঞাপন চলেছে প্রতিদিন। কমিউনিটির পত্রিকাগুলো আমাকে নিয়ে নিউজ করেছে। এই নির্বাচন নিয়ে মূলধারার টিভিতে নিউজ হয়েছে প্রতিনিয়ত। এত কিছুর পর যখন কোনো বাঙালির কাছে শুনি ‘কীসের নির্বাচন চলছে ভাই’, আপনিই বলেন কেমন লাগে? এমন প্রশ্ন যখন শিক্ষিত মানুষের কাছে শুনি তখন খুব কষ্ট লাগে। আপনি জানেন স্বল্পশিক্ষিত মানুষ কোনো দেশেই নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামায় না। বাঙালিদের এমন উদাসীনতার অন্যতম কারণ তারা মনে করে তাদের ভোটে তেমন কিছু আসে-যায় না। অথচ নিউইয়র্কের ৫১টা ডিস্ট্রিকের অন্তত ৩-৪টিতে বাঙালী ভোটার অনেক বেশি। আমাদের অধিকারের কথা আমাদেরই বলতে হবে। কাউন্সিলে আমাদের প্রতিনিধি না থাকলে আমাদের কথা কে বলবে? কেন বলবে? এটা আমাদের ভাবতে হবে।
হেলাল শেখের কথার প্রতিফলন পাওয়া যায় ব্যবসাহী শরীফ আলম হীরার কথায়। শরীফ টেক্স সার্ভিসের কর্ণধার হীরা বলেন, মেয়র পদে কারা নির্বাচন করছেন ভালো করে জানি না। সত্যি কথা বলতে কী ‘ব্লাজিও ছাড়া কাউকে চিনি না’। তিনি তো গতবার পাস করে ইমিগ্রান্টদের জন্য ভালো কাজ করছেন। তিনি মানুষ হিসেবেও ভালো। এবারও তাঁকেই ভোট দেব। আর কাউকে চিনেই বা লাভ কী? কী কী পদে ভোট দিতে হবে তা-ও জানি না। তবে এখনো তো সময় আছে। জেনে যাব ভোট দিতে যাওয়ার আগে। হীরা ২৫ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন।
নিউইয়র্ক সিটি অফিসে চাকরি করা ব্রুকলীনের বাসিন্দা আজাদ পারভেজ খান ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, প্রবাসে কোনো সমিতির নির্বাচন হলে উত্তেজনায় মারামারি পর্যন্ত বাধায়। অথচ এর কিছুই তাদের কোনো কাজে আসে না। আর যে সিটি নির্বাচনের ওপর তাদের কল্যাণ এবং সুযোগ-সুবিধা নির্ভর করে তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এই নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর ছাড়াও ৫টি বরোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। পাবলিক অ্যাডভোকেট, কম্পট্রোলার, ব্রুকলিন ও ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক অ্যাটর্নিও নির্বাচিত হবেন এই নির্বাচনে। এই পদগুলোর নামই আমরা জানি না। তাঁরা কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেন তা কী করে জানব?
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক শাহেদ আলম বলেন, ‘আমেরিকার জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আমেরিকানদের মধ্যে খুব বেশি আগ্রহ থাকে না। এর অন্যতম কারণ এখানকার ব্যস্ত জীবন। আমাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। আমাদের কমিউনিটি দিন দিন বড় হচ্ছে এটা আমরা বুঝতে পারি। সিটিতে আমাদের এই কমিউনিটির অধিকারের কথা যে আমাদেরই বলতে হবে এই বোধ এখনো তৈরি হয়নি। এই বোধ তৈরির জন্য কমিউনিটির নেতা ও সমাজকর্মীদের উদ্যোগ নিতে হবে। এখন যদি আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি তাহলে ১০ বছর পর হয়তো সিটিতে আমাদের নিজেদের একজন নেতা পাওয়া যাবে।’