'কনটেমপোরারি বাংলাদেশি পোয়েট্রি'র প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশনা উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে ‘কনটেমপোরারি বাংলাদেশি পোয়েট্রি’ গ্রন্থের অনুবাদক কবি হাসানআল আবদুল্লাহ
প্রকাশনা উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে ‘কনটেমপোরারি বাংলাদেশি পোয়েট্রি’ গ্রন্থের অনুবাদক কবি হাসানআল আবদুল্লাহ

কবি হাসানআল আবদুল্লাহ অনূদিত ‘কনটেমপোরারি বাংলাদেশি পোয়েট্রি’ অ্যান্থলজির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ অক্টোবর জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজায় এই প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

‘শব্দগুচ্ছ’ পত্রিকার ব্যানারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মার্কিন কবি ও প্রকাশক স্ট্যানলি এইচ বারকান। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুলের ধারাবাহিকতায় হাসানআল আবদুল্লাহকে কবিতার ভেতর দিয়ে আমি চিনি। তিনি শুধু নিজের কবিতাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে সরিয়ে রেখে তাঁর দেশের কবিতাকে উপস্থাপন করতেই ভালোবাসেন। ”

স্ট্যানলি এইচ বারকান বলেন, ‘২০০০ সালে আমি হাসানআল আবদুল্লাহর প্রথম বই ‘বেথ অব বেঙ্গল’ প্রকাশ করি।’ বারকান তাঁর লেখা ‘ঢাকা-কুইন্স’ কবিতাটি পড়ে শোনান।

লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়েটিভ রাইটিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ার প্রফেসর জন ডিগবি সিটি কালচারাল অ্যাফেয়ার্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই বইটি পাবলিক লাইব্রেরিসহ এ দেশে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে স্থান পাবে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বাংলা কবিতার সাধ পেতে এই বইটি হাতে তুলে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ডিগবি হাসানআল আবদুল্লাহর সনেট ও ইংরেজি-ইতালিয়ান সনেটের একটি তুলনামূলক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘হাসানআল যেভাবে সনেটকে দেখেন আমরা কেউ সেভাবে দেখতে পারিনি।’ জন ডিগবি সংকলন থেকে হাসানআল আবদুল্লাহর ‘স্বতন্ত্র সনেট ৭৭’ আবৃত্তি করে শোনান।

এর আগে দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয় কবি বিল ওয়ালেকের আবৃত্তির ভেতর দিয়ে। তিনি শামসুর রাহমান ও শহীদ কাদরীর কবিতা পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘এই সংকলনটি একটি অত্যন্ত সফল অনুবাদ, যা ইংরেজি ভাষার কাব্যমোদীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলেই আমি মনে করি।’

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলাস বান্স দীর্ঘ সময় ধরে এই সংকলনটি নিয়ে হাসানআল আবদুল্লাহর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা পাঠকদের দুর্ভাগ্য যে এঁরা শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদের মতো শক্তিশালী কবিকে চিনতে পারেননি।’ তিনি হুমায়ুন আজাদ ও রফিক আজাদের কবিতা পড়ে শোনান। তাঁর আলোচনায় আহসান হাবীব, সৈয়দ শামসুল হক ও নির্মলেন্দু গুণের কবিতাও উঠে আসে।

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আমি হাসানআলের অনুরোধে একটি প্রবন্ধ লিখেছি। তাঁর শততম জন্মদিন উপলক্ষে প্রবন্ধটি খুব আনন্দের সঙ্গে লিখছি। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাই নন, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতা ছিলেন।’

প্রাবন্ধিক আহমদ মাযহার এই সংকলনটির বহুল প্রচার কামনা করেন। বেলাল বেগ ও সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ এই বইকে বাংলাদেশের কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থাপন হিসেবে বর্ণনা করে প্রকাশক ও অনুবাদককে ধন্যবাদ জানান।

কবি শামস আল মমীন দ্বিভাষিক কবিতা পত্রিকা ‘শব্দগুচ্ছ’ প্রকাশ ও ‘কনটেমপোরারি বাংলাদেশি কবিতা’ অনুবাদ ও সম্পাদনার ভেতর দিয়ে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলা কবিতার একটি উজ্জ্বল অবস্থান তৈরি করার জন্য হাসানআল আবদুল্লাহকে সাধুবাদ জানান।

কবি নাজনীন সীমন সংকলন থেকে কবি আবুল হাসান ও নিজের একটি কবিতা পড়ে শোনান। সংকলন থেকে আরও কবিতা পড়েন নতুন প্রজন্মের মাহিরা রাহিম ও সামান্থা রহমান। কৌতুক পরিবেশন করেন শহীদ উদ্দীন।

অনুষ্ঠানে কবির ছেলে একক সৌবীর বলেন, তাঁর বাবা নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম হিসেবে কবিতাকে বেছে নিয়েছেন।