‘আমরা সবাই মোহাম্মদ বিন সালমান’

সৌদি যুবরাজের সমর্থকেরা টুইটারে নতুন হ্যাশট্যাগ তৈরি করে তাঁর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। সমর্থকদের ভাষ্য, মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জামাল খাসোগিকে হত্যায় যুবরাজকে দায়ী করা হলেও জোরালো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
এএফপির ফাইল ছবি

‘আমরা সবাই মোহাম্মদ বিন সালমান’। এটি একটি হ্যাশট্যাগ। ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যায় সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর টুইটার এই হ্যাশট্যাগ ছড়িয়েছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক মিনিট পরই তাঁর সমর্থকেরা যুবরাজের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবাই মোহাম্মদ বিন সালমান’—নতুন একটি হ্যাশট্যাগ তৈরি করেন সৌদি যুবরাজের সমর্থকেরা। তাঁদের ভাষ্য, মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যুবরাজ বিন সালমানের সম্পৃক্ত থাকার জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। আর মানবাধিকার সংগঠনগুলো চাইছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের শাসনামলে সেটা আরও পোক্ত হয়। তবে বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিক খাসোগি হত্যা ও ইয়েমেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে শীতলতার আভাস স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদির নেতৃত্ব সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে নেতিবাচক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই ‘বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের’ বিচার করেছেন সৌদি আরবের আদালত। যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাঁদের সাজাও হয়েছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমর্থকেরা যেমন সরব হয়েছেন, তেমনি দেশটির বিশ্লেষকেরাও এই ঘটনায় সরব। সরকারপন্থী বিশ্লেষকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁদেরই একজন আলি শিহাবি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আরাবিয়া ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি টুইটারে লিখেছেন, এই প্রতিবেদনে এমন কিছু নেই, যা আগে বলা হয়নি। এ ছাড়া যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনো তথ্যপ্রমাণ এতে নেই। যুবরাজের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো প্রমাণ এই প্রতিবেদনে নেই।


একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আবদুল রহমান আল-রাশেদ। সরকারনিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদমাধ্যমে কলাম লেখেন তিনি। তিনিও টুইটারে লিখেছেন, যুবরাজকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনো তথ্যপ্রমাণ মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নেই।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদন নিয়ে সৌদি আরবের সংবাদপত্র ও টেলিভিশনগুলো কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। সৌদির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল আরাবিয়ায় শুধু সন্ধ্যার খবরে ছোট করে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে। তবে এতেও তথ্যপ্রমাণের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর দেশটির পত্রিকা ওকাজ শিরোনাম করেছে ‘দেশ সুরক্ষিত’। এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি বড় ছবি জুড়ে দিয়েছে।


তবে অধিকারকর্মীরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁরা যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা চাইছেন। জামাল খাসোগি হত্যার তদন্তে স্বচ্ছতা আনায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ।
‘আমরা সবাই মোহাম্মদ বিন সালমান’ হ্যাশট্যাগ যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি ‘খাসোগির হত্যাকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান’ এই হ্যাশট্যাগও ট্রেন্ড হয়েছে টুইটারে। এ ছাড়া খাসোগির বাগ্‌দত্তা হাতিজে জেঙ্গিস টুইট বার্তায় খাসোগি হত্যার বিচার চেয়েছেন।