আরব লিগের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবে না ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি
ছবি: রয়টার্স

আরব দেশগুলোর জোট আরব লিগের বৈঠকে সভাপতিত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিন। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দুই আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইন চুক্তি করার প্রতিবাদে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ফিলিস্তিন। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি। ফিলিস্তিন আগামী ছয় মাস আরব লিগের বৈঠকে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয় সম্প্রতি। ফিলিস্তিন এই চুক্তিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আরব লিগের যেকোনো নীতিমালার লঙ্ঘন ও অবমাননা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আমিরাত ও বাহরাইনকে নিন্দা জানাতে চলতি মাসে আরব লিগের প্রতি আহ্বান জানায় ফিলিস্তিন। কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ফিলিস্তিনের নেতারা। এরপর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল ফিলিস্তিন।

আগামী ছয় মাস আরব লিগের যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, তাতে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ফিলিস্তিনের। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে সংবাদ সম্মেলন করে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেন, তারা আর ওই পদে থাকতে চান না। তিনি বলেন, ‘(আরব) লিগের সম্মেলনে (পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের) সভাপতিত্ব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিন। আরবরা যখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছে, তখন এর সভাপতি পদে থাকার আর সম্মান থাকে না।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশশাসিত ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্ম হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বানানো এই রাষ্ট্রকে কখনো মেনে নেয়নি আরবরা। ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও সবশেষ ১৯৭৩ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইসরায়েলের। প্রতিবারই আরবরা পরাজিত হয়। এরপর থেকেই ইহুদিদের কাছে জমি হারাতে বসে ফিলিস্তিনিরা। স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুটি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংঘাত মেটানোর চেষ্টা করলেও তা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলো প্রধান তিনটি শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো হলো, যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলোর দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের দখল করা জমি হস্তান্তর। সেই শর্তের একটাও পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও আরব দেশগুলো ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছে। এখন পর্যন্ত আমিরাত ও বাহরাইন ছাড়া আরও দুই আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি হয়েছে। ১৯৭৯ সালে মিসরের সঙ্গে এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসরায়েল।