মাদক আমাকে খেয়ে ফেলেছে

একসময়ের টগবগে যুবক আকিক (৩৫) এখন অসুস্থ। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত মাদক সেবনের ফলে তাঁর শরীর শীর্ণকায় হয়ে গেছে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি তিনি। অনেকটা আক্ষেপে আকিক বললেন, ‘আমি তো মাদক খাইনি, মাদকই আমাকে খেয়ে ফেলেছে।’
আকিকের মতো শেরপুরের অনেক তরুণই আজ মাদকাসক্ত। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, আফিমসহ ইনজেকশন-জাতীয় নেশাদ্রব্য। এতে সচেতন মহল ও অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করলেও মূল হোতাদের আটক করতে পারছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের অর্ধশতাধিক চিহ্নিত পয়েন্টে গড়ে উঠেছে মাদকসেবীদের আস্তানা। শহরের গৌরীপুর, খরমপুর, চাপাতলী, শেরীঘাট, কুসুমহাটী, মীরগঞ্জ, বাগরাক্সা, নৌহাটা, নবীনগর, চকপাঠক, শেখহাটী, পুরাতন গরুহাটী, চকবাজার, শিংপাড়া, মাধবপুর, নারায়ণপুর, নাগপাড়া, নিউ মার্কেট, বাগানবাড়ী, বটতলা, সজবরখিলা এবং আখের মাহমুদের বাজার হলো এসব মরণনেশার প্রধান ব্যবসা ও সেবনস্থল। তরুণ ঠিকাদার, উঠতি নেতা, ছাত্র-যুবক, শ্রমিকনেতা, উদীয়মান ব্যবসায়ীরাই মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার সভানেত্রী জয়শ্রী দাস মাদকের অপব্যবহারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এতে শুধু যুবসমাজই বিপথগামী হচ্ছে না, পাশাপাশি নারীরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে একটি কার্যালয় থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মাহবুবুর রহমান গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বিগত দেড় বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শেরপুর জেলার বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা হয়েছে।
শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপরতা ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।