মাদক ছাড়তে পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন

হাতে টাকা দিয়ে নয়, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করতে মানসিক সহযোগিতা প্রয়োজন। চিকিৎসা ও পরামর্শকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাদকাসক্তকে মানসিকভাবে তৈরি করা প্রয়োজন। মাদক ছাড়াতে চিকিৎসা ও পরামর্শকেন্দ্রের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল শুক্রবার ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে মাদক পরামর্শ সহায়তা সভা-১৬তে পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সমস্যা তুলে ধরেন তাদের অভিভাবক ও স্বজনেরা।
অনুষ্ঠানে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স ২২ বছর। সে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরায় মাদক নেয়। সম্প্রতি তার দেহে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ধরা পড়েছে। তার পরও সে মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছে না।’ অন্য এক অভিভাবক বলেন, ‘বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় আমার ছেলে মাদক নিতে থাকে। এখন সে বিদেশে যেতে চাচ্ছে। তবে সে এখনো সুস্থ নয়।’ অনুষ্ঠানে এক নারী জানান, তাঁর স্বামী ফেনসিডিলে আসক্ত। তবে তিনি নিজেই চাইছেন মাদক ছাড়তে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তাজুল ইসলাম জানান, একজন মাদকাসক্তের মন দুইভাবে কাজ করে। একদিকে সে মাদকের ক্ষতিটা বোঝে, অন্যদিকে সে-ই মাদক নিতে উন্মুখ থাকে। এ মানসিক অবস্থা বুঝে তাকে পরামর্শ অথবা চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে প্রস্তুত করতে হবে। মাদক নেওয়ার ফলে সে যে অপকর্ম করছে, তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। এ ব্যাপারটি তাকে বোঝাতে হবে।
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের চিকিৎসক আখতারুজ্জামান সেলিম জানান, মাদকের জন্য টাকা আদায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারের লোকজনকে ভয় দেখায় ও ভাঙচুর করে। তা সত্ত্বেও তার হাতে টাকা দেওয়া যাবে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক খালেদা বেগম বলেন, মাদক থেকে মুক্ত থাকতে মাদকাসক্তকে সারা জীবনই এক ধরনের চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকতে হয়। মাদক থেকে মুক্ত থাকতে বিদেশ যাওয়া কোনো ভালো ফল দেয় না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বিদেশেও এরা মাদকে জড়িত থাকে।
মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র ‘ক্রিয়া’র পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি চাপ দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে তাদের জীবনে হতাশা নেমে আসে। মনে রাখতে হবে, আগে জীবন, পরে অর্জন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সিফাত-ই-সাঈদ বলেন, শিরায় মাদক নেয়া খুবই বিপজ্জনক। এর কারণে ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ ঘটে।
অনুষ্ঠানে মাদক ছেড়ে দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি প্রায় ১২ বছর মাদক নিয়েছি। এক দিন আমার বাবার কথায় আমার উপলব্ধি আসে। এখন আমি মাদক নিই না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।’
প্রথম আলোর বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান রওশনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রিয়ার কর্মকর্তা কাজী সুমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক আহমেদ হেলাল প্রমুখ।