আলোর পাঠশালা' পাচটি স্কুলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এরকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।
সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বর্তমানে ৪টি স্কুল পরিচালনা করছে। অবহেলিত এসব এলাকার শিশুরা শিক্ষার পরিবর্তে অল্প বয়সেই বিভিন্ন কায়িক শ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তো। এর পেছনে অসচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব ছিল একটা বড় কারণ।
সামিট গ্রুপের  সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় এসব দুর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে যাচ্ছে সবার মধ্যে, আলোকিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া এসব মানুষ। তাছাড়া বিদ্যালয়গুলোকে ঘিরে ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, সরস্বতী পূজা, বার্ষিক খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। তখন গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়। বিদ্যালয়গুলোকে ঘিরে গ্রামের মানুষ এক হয় যা সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ায় এবং সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘আলোর পাঠশালা’ চারটি স্কুলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হল-

এক নজরে পাচটি স্কুল
১. প্রথম আলো চর বিদ্যালয়। ঠিকানা: প্রথম আলো চর, ঘোগাদহ, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম।
২. প্রথম আলো ট্রাস্ট বাবুডাইং আদিবাসী বিদ্যালয়। ঠিকানা: বাবু ডাইং, গোদাগাড়ী , রাজশাহী।
৩. প্রথম আলো ট্রাস্ট আলোর পাঠশালা। ঠিকানা: মদনপুর , দৌলতখান , ভোলা।
৪. প্রথম আলো ট্রাস্ট চর খিদিরপুর বিদ্যালয়। ঠিকানা: চরখিদিরপুর, পবা, রাজশাহী।

৫.প্রথম আলো ট্রাস্ট আলোর পাঠশালা । ঠিকানা: শালগড়িয়া কামদেবপুর, নিয়ামতপুর, নওগা।

স্কুলের নাম: প্রথম আলো চর বিদ্যালয়
ঠিকানা: প্রথম আলো চর, ঘোগাদহ, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম।
স্থাপিত: ২০০৯

পত্রিকা প্রকাশের পর থেকেই প্রথম আলো কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ চরে বন্যার্তদের ত্রাণ দেওয়াসহ নানা সেবামূলক কাজ করে। ২০০৫ সালে এখানকার বাসিন্দারা এ চরের নাম দেয়‘ প্রথম আলোর চর’। এই চরে ২০০৯ সালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শিশু শ্রেণী দিয়ে বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর চরে উচ্চবিদ্যালয়ের অভাবে শিার্থীরা ঝরে যেত। এদের কথা চিন্তা করে ষষ্ঠ শ্রেণী, সপ্তম শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে।
চরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আউয়াল ৩৩ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। চরে ১৬টি পরিবার থেকে হয়েছে সাড়ে তিন শ পরিবার। চর বড় হয়েছে আগের থেকে চার গুণ।
জমিদাতা আবদুল আউয়াল, সোবহান মিয়া ও মো. ফজল উদ্দিন বলেন, প্রথম আলো চর ফসলে ভরে গেছে। অভাব দূর হয়েছে। বিদ্যালয় না থাকলে আমাদের ছেলেমেয়েরা মূর্খ থেকে যেত। শিার্থীরা আগামীতে এখান থেকে এসএসসি পরীা দেবে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিদ্যালয়টি দেখে মন্তব্য করেন, এত দুর্গম এলাকায় এমন চমৎকার উদ্যোগের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক ও একজন আয়া রয়েছেন। পাঠদানের জন্য তিনটি বড় ঘর, টিউবয়েল, শৌচাগার ও শিকদের বিশ্রামাগার রয়েছে। এতে সামিট গ্রুপ সহায়তা করছে।
শিক্ষার্থী   সংখ্যা:
প্রথম আলো চর বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ক্লাস হয়। প্রথম শিফটে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হয়।

শিশুশ্রেনী ২৫ জন , প্রথমশ্রেনী  ৭০ জন,  দ্বিতীয় শ্রেনী ৫৬ জন,  তৃতীয়শ্রেনী ৫০ জন, চতুর্থ শ্রেনী  ৩৬জন, পঞ্চম শ্রেনী ২৩ জন, ষষ্ঠ শ্রেনী ৯ জন , সপ্তম শ্রেনী ৬ জন  ।

স্কুলের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট বাবুডাইং আদিবাসী বিদ্যালয়
ঠিকানা: বাবুডাইং, গোদাগাড়ী, রাজশাহী
স্থাপিত: ২০১০

শিক্ষার্থী  সংখ্যা:
প্রথম আলো ট্রাস্ট বাবু ডাইং আদিবাসী বিদ্যালয় দুই শিফটে কাস চলে। প্রথম শিফটে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী এবং দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর কাস হয়। বর্তমান শিার্থী সংখ্যা  দেওয়া হলো।

শিশুশ্রেনী ২৫ জন , প্রথমশ্রেনী  ৭০ জন,  দ্বিতীয় শ্রেনী ৫৬ জন,  তৃতীয়শ্রেনী ৫০ জন, চতুর্থ শ্রেনী  ৩৬জন, পঞ্চম শ্রেনী ২৩ জন, ষষ্ঠ শ্রেনী ৯ জন , সপ্তম শ্রেনী ৬ জন  ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাবু ডাইং আদিবাসী শিশুদের শিার জন্য ২০১০ সালে ট্রাস্টের প থেকে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশে পাশে উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় ৫ম শ্রেণী পাশ করার পর শিার্থীরা লেখাপড়া বন্ধ করে দিন মজুর করছিল। ২০১৪ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং ২০১৫ সালে সপ্তম শ্রেণী চালু করা হয়েছে।

স্কুলের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট বিদ্যালয়, ভোলা
ঠিকানা: মদনপুর, দৌলতখান, ভোলা
স্থাপিত: ২০১৫

প্রাকৃতিক দুযোর্গ সিডরে তিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রথম আলো প থেকে ভোলা মদনপুর চরে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছিল । ২০১৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুপান্তর হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের অনুরোধে  নিম্ন মাধ্যমিক  বিদ্যালয় চালু করা হয়।
শিক্ষক সংখ্যা- ৪ জন ও কেয়ারটেকার ১ জন

শিক্ষার্থী সংখ্যা:
ষষ্ঠ শ্রেণী:  ১৯ জন  । সপ্তম শ্রেণী:  ১৮ জন  । অষ্টমশ্রেনী: ১৪ জন ।

স্কুলের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট চর খিদিরপুর বিদ্যালয়, রাজশাহী
ঠিকানা: চরখিদিরপুর, পবা, রাজশাহী
স্থাপিত: ২০১৫

শিক সংখ্যা- ৪ জন ও কেয়ারটেকার ১ জন

শিক্ষার্থী সংখ্যা:
ষষ্ঠ শ্রেণী:  ১৯ জন  । সপ্তম শ্রেণী:  ১৮ জন  । অষ্টমশ্রেনী: ১৪ জন ।

সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আলোর পাঠশালাগুলো অবহেলিত এসব অঞ্চলে শিার আলো পৌঁছে এবং সমাজে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। আশা করছি, সামিটগ্রুপের সহযোগিতা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে দেশের প্রত্যন্ত ও অবহেলিত এসব এলাকায় আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে।