'কী যে উপকার হলো বুলে বোঝানো যাবি না'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে শীতার্ত ব্যক্তির মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে শীতার্ত ব্যক্তির মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে স্কুলের মাঠে হাজির তাঁরা। একটু উষ্ণতার আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন কুয়াশাঢাকা সকালে। এই কষ্ট বৃথা যায়নি তাঁদের। হতাশ হতে হয়নি কাউকেই। কম্বল দিয়ে এই দরিদ্র শীতার্ত মানুষের উষ্ণতার পরশ দিয়েছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ওই শীতার্ত মানুষের মধ্যে ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়। সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের সহযোগিতায়, প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এদিন আরও চার জেলায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে ৬১০ কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজশাহীর বাঘায় কম্বল নিতে আসা বয়োজ্যেষ্ঠ সেরাজ প্রামাণিক বলেন, ‘এইবার যে শীত পড়ছে, জীবনে এত শীত দেখি নাই বাবা। গরম কাপড় গায়ে দিলেও হাত-পা শক্ত হয়্যা যায়। এই কম্বলডা পায়্যা যে কী উপকার হলো, বুলে বোঝানো যাবি না।’

কম্বল বিতরণকালে বাঘার আড়ানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তানভীর আল ইসলাম, রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বাঘা বন্ধুসভার সভাপতি তোফাজ্জল কবিরসহ অন্য বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বুড়াবুড়ি ও শালবাহান ইউনিয়নের শিলাইকুটি, বালাবাড়ী, কালদাসপাড়া, নাওয়াপাড়া, রাজুগছ, দধিগছ, গোয়াবাড়ী, ধারাগছ ও গড়াগছ গ্রামের ১৬০ জন দুস্থ শীতার্ত চা ও পাথরশ্রমিকের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে বন্ধুসভার ১৯ সদস্যের একটি দল বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে প্রকৃত দুস্থ মানুষের তালিকা তৈরি করে। বিকেলে শালবাহানে ডাহুক নদীর পারে লোহাকাচি এলাকায় এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

এ সময় পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি ওয়াকিউর রহমানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কম্বল বিতরণকালে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ চা ও পাথরশ্রমিক। তাঁদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। তীব্র শীতে কম্বল পেয়ে তাঁদের খুব উপকার হবে। প্রথম আলোর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

বরগুনা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ১৫০ হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। এ সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম বলেন, প্রথম আলো শুধু সংবাদই প্রকাশ করে না; পাশাপাশি সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে, নির্যাতিতদের সহায়তা করে, দুর্যোগে ত্রাণ দেয়। তীব্র শীতে এখন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলো হতদরিদ্র মানুষের প্রকৃত বন্ধু।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বেলতলী বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকালে আবদুলপুর, সরকারপাড়া, রানীবন্দর, বেলতলী, ভেন্ডারপাড়া, বাংলাবাজারসহ ১২টি গ্রামের ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম রব্বানী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কম্বল বিতরণ করেন। এ সময় বেলতলী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এম এফ মোরশেদ উল আলম ছাড়াও বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গায় দুপুরে আলমডাঙ্গা বেদপল্লি, রেললাইন বস্তি ও বালুর মাঠ এলাকায় দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে ১০০ কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। এ সময় আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকার বৃদ্ধা সুখখাতি বেদ (৭৫) কম্বল পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলে বলেন, ‘বড় জাড়ের ভেতরে এই কোম্বলডা দিলে বাপু। ওমে এবেড্ডা ঘুমাতি পাইরবুনি।’ এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা ওই সব এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করেন। তালিকায় ৭৫ বছরের বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে সাত-আট বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীও ছিল। কম্বল বিতরণের সময় স্থানীয় বেদ সম্প্রদায়ের নেতা সাধন বেদ, সমাজকর্মী ডালিম খাতুন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রহমান, চুয়াডাঙ্গা বন্ধুসভার সভাপতি রনি আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।