Thank you for trying Sticky AMP!!

বিক্রেতা নেই, বই কিনুন নিজ দায়িত্বে

বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ের দিকে গেলে সহজেই নজরে পড়বে দুটি শিশুর প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো একটি স্টল। সেখানে লেখা ‘এক টাকায় আহার’। সামনে বই সাজানো। পাশে টাকা রাখার বাক্স ও রসিদ বই। এই স্টল থেকে বই কিনতে হবে নিজ দায়িত্বে। পাশেই টাঙানো আছে মূল্যতালিকা।

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একটি স্টল এটি। তারা বিদ্যানন্দ প্রকাশনী নামে গত বছর থেকে বইমেলায় স্টল নিয়ে বসছে। তবে এ বছরই তারা ‘বিক্রেতাবিহীন’ স্টল দিয়েছে।

ভিন্নধর্মী হওয়ায় অনেকেরই নজর কাড়ছে এই স্টল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় সবাই একবার উঁকি দিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজ দায়িত্বে বইও কিনছেন। সুজাত রায়হান নামের একজন এসেছিলেন বইমেলায় কী কী বই এসেছে, তা দেখতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে বই কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। কিন্তু বিদ্যানন্দের এই স্টল দেখে আমি একটি বই কিনলাম।’

রওশনা ইলা ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যানন্দের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁরা ভালো সাড়া পাচ্ছেন। সবার কাছ থেকে প্রশংসাও পাচ্ছেন।

স্টলে বিক্রেতা না রাখার প্রসঙ্গে রওশনা ইলা বলেন, ‘দেশে এখনো সততা আছে। সততা না থাকলে দেশ এগোতে পারত না। বইয়ের দোকানটাও চালাতে পারতাম না।’ তিনি আরও বলেন, এখানে মানুষ বই কিনতে আসে। যিনি বই কিনতে আসেন তিনি চোর হন না। তাঁর মতে, ভালো মানুষেরাই বই কেনেন। পথশিশুদের নিয়ে যাঁরা চিন্তা করেন, তারা টাকা না দিয়ে যাবেন না।

বিক্রেতাবিহীন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একটি স্টল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, ঢাকা, সাম্প্রতিক ছবি। ছবি: সুহাদা আফরিন

বিক্রেতা না থাকায় কোনো বই হারিয়েছে কি না? জানতে চাইলে এই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘যেটা হয়েছে তা ধরার মতো কিছু না।’

বই বিক্রির এই টাকা বিদ্যানন্দ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পেছনে ব্যয় করবে বলে জানানো হয়। প্রতিদিন মেলা শুরু হওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবকদের কেউ এসে স্টল খুলে দিয়ে যান এবং দিন শেষে আবার কেউ এসে এটা বন্ধ করে দেন।

‘এক টাকায় আহার’ বিদ্যানন্দের একটি প্রকল্প, যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার পথশিশু ও অসহায় মানুষের জন্য খাবার রান্না করা হয়। এক টাকার বিনিময়ে তারা এ খাবার কিনে খেতে পারে।

মো. মহসিন নামের আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, এই স্টলটা পথশিশুদের জন্য। এখানে তাদেরই থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই শিশুদের কাউকে রাখা সম্ভব হয়নি বলে শিশুদের প্রতিকৃতি বানিয়ে রাখা হয়েছে। মহসিন জানান, বিদ্যানন্দ থেকে এবার ১৫টি বই এসেছে। প্রত্যাশার চাইতেও বেশি বিক্রি হচ্ছে।

মুজাহিদুল আলম নামের এক ক্রেতা জানান, ‘এটার মাধ্যমে নিজেকে পরীক্ষা করতে পারি যে আমি কতটুকু সৎ। এটা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।’