Thank you for trying Sticky AMP!!

শাহেদ আলীর সঙ্গে কিছুক্ষণ

১৯৮৫। চলছে ঢাকা থিয়েটারের নাটক কীত্তনখোলার ১০০তম প্রদর্শনী। ছোট্ট শাহেদ আলী তখন ক্লাস ফাইভে। সেই বয়সেই তাঁর মনে হলো, একটা নাটক এতবার দেখাচ্ছে, কী আছে এতে, তা দেখতে হবে। বাবার কাছে গিয়ে নাটক দেখার বায়না ধরলে বাবা নাকচ করে দিলেন প্রস্তাব। মন খারাপ করে রইলেন শাহেদ আলী, সারা দিন। পরদিন স্কুলেও মন খারাপের রেশ থাকল। হঠাৎ টিফিনের সময় বাবা স্কুলে উপস্থিত। বললেন, স্কুল শেষে কীত্তনখোলা দেখাতে নিয়ে যাবেন। স্কুল শেষে বাবা-ছেলে মিলে গেলেন ঢাকার বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে। সেখানে গিয়ে জানা গেল, টিকিট শেষ। তাহলে? ছেলের মন ভোলাতে বাবা বললেন, চল, তোকে আজ চায়নিজ খাবার খাওয়াব। শাহেদ আলী গোঁ ধরেছে। নাটক না দেখে সে ফিরবে না। এমন সময় একজন বললেন, তাঁর কাছে টিকিট আছে। তাঁরা নাটক দেখবেন না। বাবা-ছেলে লুফে নিলেন টিকিট।

এ রকম হাজারো গল্প আছে অভিনয়শিল্পী শাহেদ আলীর জীবনে। প্রাচ্যনাটে কাজ করছেন প্রায় ১৫ বছর। এর মধ্যে বেশ কিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন।

স্বপ্ন দেখতেন হুমায়ুন ফরীদির মতো অভিনয়শিল্পী হবেন। ঢাকা থিয়েটার তখন তাঁর কাছে স্বপ্নের দল। হুমায়ুন ফরীদি কাজ করেন এই দলে। নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলেন। বাবা বললেন, এসএসসি পাস করে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হতে পারলে তবেই মঞ্চে কাজ করতে দেবেন। শাহেদও এই শর্ত মেনে নিলেন। ভর্তি হলেন নটর ডেম কলেজে। তাঁকে আর পায় কে! ‘দাদা অভিনয় করতেন যাত্রায়। সেই পথ ধরে বাবাও। কিন্তু পারিবারিক ব্যবসার কারণে বাবা অভিনয় চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু অভিনয়ের পোকা ঢুকে গেল আমার মাথায়।’

ইংরেজি সাহিত্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চলছে। বন্ধু কেতনের বাবা চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান। তিনি অভিনয়জীবনের শুরুতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানলেন, বলিউড অভিনেতা আমির খানও শুরুতে সহকারী পরিচালক ছিলেন। শাহেদ আলী ভাবলেন, তাহলে এটিই করি না কেন।

‘আবু সাইদ খানের মাধ্যমে প্রথমে সহকারী পরিচালনা শুরু করা। এরপর প্রাচ্যনাটে যোগ দেওয়া। আজও আছি এর সঙ্গে।’ বলেন তিনি। ‘এর মধ্যে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়তে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রাচ্যনাটের প্রেমে পড়ে তা আর হলো না।’

রেডিওতে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করলেন। পরিচয় হলো গিয়াসউদ্দীন সেলিমের সঙ্গে। তাঁর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করলেন। ছিলেন মনপুরা চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালকও।

তবে অভিনয় যাঁর রক্তে, তাঁকে কি আটকে রাখা যায়? হারানের নাতজামাই নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন। এরপর একে একে রূপকথা, সাতকাহন, অঘটনঘটনপটীয়সী, অন্তরীক্ষ—আরও কাজ। এই মুহূর্তে প্রচারিত হচ্ছে অরণ্য আনোয়ারের কর্তাকাহিনি এবং মাতিয়া বানু শুকু এবং যুবরাজ খানের প্রজ্ঞা পারমিতা।

চলচ্চিত্রেও পা দিয়ে ফেলেছেন। গৌতম ঘোষের মনের মানুষ-এর পর মুক্তির অপেক্ষায় আছে অমিত আশরাফের উধাও (রানঅ্যাওয়ে) চলচ্চিত্রটি। ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের মতো হলিউড অভিনেতার সঙ্গে তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলেসে অ্যাকশন অন ফিল্ম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০১২তে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

করছেন বিজ্ঞাপনের কাজও। সব মিলিয়ে অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে চান। শাহেদ আলী বলেন, ‘জীবনে আর কিছু করার চেষ্টা করিনি। শুধু অভিনয়ই করে যেতে চাই।’ ঢাকার ধানমন্ডির বাসায় যখন কথা হচ্ছিল, তখন টেলিভিশনে শুরু হয়ে গেছে ক্রিকেট। শাহেদ আলীর একমাত্র ছেলে ছোট্ট আদ্রিক এসে বসল বাবার পাশে। একটু পরে এলেন স্ত্র্রী অভিনয়শিল্পী দীপা খন্দকার। সব মিলিয়ে এই হলেন অভিনয়শিল্পী শাহেদ আলী।