Thank you for trying Sticky AMP!!

হালকা প্রকৌশল শিল্পে সমৃদ্ধির স্বপ্ন

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নীলফামারীর সৈয়দপুর। এ শহরের হালকা প্রকৌশল শিল্প থেকে বছরে ৩০০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। এ শিল্প দেখাচ্ছে সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার স্বপ্ন। হালকা প্রকৌশল শিল্পে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

গোড়ার কথা

১৮৭০ সালে ব্রিটিশরা সৈয়দপুরে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা গড়ে তোলেন। ওই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকরা সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় চাকরি নেন। তাঁদের অনেকে অবসরে গিয়ে কারখানার শিল্প–অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ শহরে গড়ে তোলেন হালকা প্রকৌশল শিল্প। পাকিস্তান আমলে সৈয়দপুরে গড়ে ওঠে হাসান ইঞ্জিনিয়ারিং, মঈন ইঞ্জিনিয়ারিং, আলী রেজা ইঞ্জিনিয়ারিং, আলী হোসেন ইঞ্জিনিয়ারিং নামের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। তখন এসব প্রতিষ্ঠানে তৈরি হতো হাসকিং মিলের (সনাতন পদ্ধতির চালকল) খুচরা যন্ত্রাংশ। উত্তরাঞ্চলে যতগুলো চালকল ছিল, তার প্রায় সব কটির যন্ত্রাংশ তৈরি হয়েছিল সৈয়দপুরে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরের নিউ মাসুম ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার মালিক নুরুদ্দিন দুলাল জানান, সৈয়দপুর হচ্ছে অনেক সম্ভাবনার জায়গা। এমন কিছু নেই যা এখানে তৈরি হয় না। স্বাধীনতার পরে সৈয়দপুরে একধরনের শিল্পবিপ্লব ঘটে।

সৈয়দপুরের হালকা প্রকৌশল পণ্য

নুরুদ্দিন দুলাল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সৈয়দপুরে তৈরি হতে থাকে সেমি–অটো ফ্লাওয়ার (ময়দা) কারখানার যন্ত্রাংশ। এসব যন্ত্র সারাদেশেই সরবরাহ করা হয়েছে। সৈয়দপুরে রয়েছে ৫০০টির বেশি হালকা প্রকৌশল কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হয় বাইসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশ, রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন কানেক্টিং, হাউজিং, হোস পাইপ, ইঞ্জিনের ঢাকনা, কাপলিং, বেয়ারিং কভার, ক্যাপ ইঞ্জিন, রেলকোচের দরজা–জানালা, হাতল ইত্যাদি।

সৈয়দপুরে চালকল, বাইসাইকেল ও রেলওয়ের যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। এখানে পাওয়া যাচ্ছে সেমাই ও চিপস তৈরির মেশিন।

সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নাঈম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা ও পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় (কেলোকা) সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া এসব কারখানায় ইটভাটার মেশিন, সেমাই ও চিপস তৈরির মেশিন তৈরি করা হয়। বিদেশ থেকে এ ধরনের একটি মেশিন আমদানিতে খরচ হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা। সেখানে সৈয়দপুরের হালকা প্রকৌশল কারখানায় এসব উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা। অন্যান্য মেশিন তৈরির ক্ষেত্রেও ৭৫ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয় বলে জানান উদ্যোক্তারা।

সিরামিক শিল্পের বলমিল

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কে টু–স্টার ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানায় বলমিল তৈরির কাজ। বলমিল সাধারণত সিরামিক শিল্পে কাঁচামাল মিশ্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অতীতে একটি বলমিল ইতালি থেকে আমদানিতে খরচ পড়ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ওই কারখানার মালিক খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা মাত্র ছয় লাখ টাকা খরচে বলমিল মেশিনটি তৈরি করে থাকি।’ ওই কারখানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচগেট, বয়লার, তামাক কাটার মেশিন ও পাথর ক্রাশিং মেশিন তৈরি হয়।

কাঁচামাল

সৈয়দপুর হালকা প্রকৌশল শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে পুরোনো লোহা, ইস্পাত শিট, জাহাজ ভাঙা লোহা, অ্যাঙ্গেল, রড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসব সংগ্রহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও স্থানীয় বাজার থেকে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সৈয়দপুর জেলা শাখার সভাপতি এরশাদ হোসেন বলেন, সৈয়দপুর লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প থেকে প্রতিবছর ৩০০ কোটি টাকা ব্যবসা হয়ে থাকে। খাতটি আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। তবে এজন্য ব্যাংক খাত থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।