Thank you for trying Sticky AMP!!

বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছেন সুপর্ণা

মালিবাগের গুলবাগ এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করেন সুপর্ণা চৌধুরী

গুলবাগ পাওয়ার হাউসের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে প্লাস্টিক শিটের ওপর দৈনিক পত্রিকাগুলো সারি করে বিছিয়ে রাখা। ২২ অক্টোবর সকালে জনৈক মহল্লাবাসী যাওয়ার সময় পথের সেই পসরা থেকে একটি প্রথম আলো তুলে নিলেন। বিক্রেতা অনুপস্থিত। দামটা তিনি রেখে গেলেন পত্রিকার সারির ভেতরেই গুঁজে দিয়ে।

খানিক পরে আরেকজন এলেন। তিনিও পসরা থেকে একটি পত্রিকা তুলে নিয়ে পাতা মেলে তাতে নজর রাখলেন। তিনিও কি আগেরজনের মতোই একইভাবে দাম রেখে পত্রিকা নিয়ে যাবেন? জানতে চাইলে বললেন, এতে কোনো অসুবিধা নেই, টাকা কেউ নেবে না। বিক্রেতা আশপাশের বাড়িতে কাগজ বিলি করতে গেছেন। কাগজ দেওয়া শেষ হলে চলে আসবেন। তিনি জানালেন, তাঁর নাম মাহবুব লাভলু, এই মহল্লাতেই থাকেন। পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তার মাঝেই কাগজ বিক্রেতা চলে এলেন। তিনি সুপর্ণা চৌধুরী।

মালিবাগ মোড়ের উত্তর–পূর্ব পাশে গুলবাগ এলাকা। সুপর্ণা চৌধুরী এ এলাকায় দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করেন ২০১৩ সাল থেকে। ঢাকায় আবাসিক এলাকাগুলোয় দৈনিক পত্রিকা বিলি-বিক্রি করার জন্য সংবাদপত্র হকার্স সমিতির সদস্য হতে হয়। সদস্যদের মধ্যে এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অন্যরা সেখানে পত্রিকা বিক্রি করতে পারেন না।

সুপর্ণা জানালেন, তাঁর বাবা মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী সমিতির সদস্য হিসেবে এই মহল্লার বরাদ্দ পেয়েছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি গুলবাগ এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করেছেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি মারা যাওয়ার পর সুপর্ণাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। বাবার পেশাটিই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন কষ্ট করে।

ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় সুপর্ণাদের গ্রামের বাড়ি। সেখানে তাঁদের সহায়–সম্পত্তি কিছু নেই। রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় তাঁরা তিন ভাইবোন থাকেন। তাঁদের মা মারা গেছেন ২০১৭ সালে। বাবার আমলের অনেক স্থায়ী গ্রাহক ছিল, তা ছাড়া গুলবাগ পাওয়ার হাউসের সামনের এই ফুটপাতে বহু বছর ধরে তাঁর বাবা পত্রিকা নিয়ে বসতেন। ফলে গ্রাহক সংগ্রহ করতে সুপর্ণার খুব একটা অসুবিধা হয়নি। চলছিল বেশ ভালোই। তবে করোনা অতিমারি শুরুর পর থেকে পড়েছেন কঠিন সংকটে। এখন সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

স্থায়ী গ্রাহক আর খুচরা বিক্রি মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন শ পত্রিকা বিক্রি করতেন সুপর্ণা। করোনা শুরুর পর এক বিরাট ধাক্কা। বাসাবাড়ির গ্রাহকেরা সবাই পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেন। ওদিকে খুচরা বিক্রিও নেমে যায় তলানিতে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ দুর্যোগ।

করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমে জীবনযাত্রা এখন স্বাভাবিক হয়ে এলেও সুপর্ণা তাঁর হারানো গ্রাহকদের সবাইকে ফিরে পাননি। স্থায়ী গ্রাহক ছিল দুই শতাধিক, এখন ৫০। দুই বছরে মানুষ অনলাইনে পত্রপত্রিকা পড়তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া জীবনযাত্রার খরচও বেড়েছে। স্থায়ী-খুচরা সব মিলিয়ে এখন ১০০ কাগজও বিক্রি হয় না।

আক্ষেপ করে সুপর্ণা বলছিলেন, ‘এখন টিসিবির চাল খাই।’ এখন ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০ টাকা কেজির মোটা চাল কেনেন। করোনার আগে নাজিরশাইল চালের ভাত খেতেন। সেটি এখন তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। সবচেয়ে কম দাম ছিল চাষের পাঙাশ মাছের, ৬০-৭০ টাকা কেজি, তা এখন উঠেছে দেড় শ টাকায়, ৫০ টাকার কমে কোনো সবজি নেই। অবস্থা এমন হয়ে উঠছে যে তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই হয়তো ভবিষ্যতে অসম্ভব হয়ে উঠবে। করোনার আতঙ্ক এখন নেই, কিন্তু তার প্রভাব বিধ্বস্ত করে দিয়ে গেছে সুপর্ণাদের মতো সংবাদপত্র বিক্রেতাদের জীবনযাত্রা।