Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে পাঠক উৎসব

সম্পর্ক, অহেতুক ভয়, শুচিবায়ু সমস্যার কথা জানিয়ে পরামর্শ পেলেন তাঁরা

স্টলের সামনে দিয়ে বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করলেন তিনি। কিন্তু ভেতরে যাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত দ্বিধা ঝাড়তে পারলেন। ভেতরে ঢুকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামালের সামনে গেলেন। নিজের সমস্যার কথা খুলে বললেন।

স্টলটি ছিল প্রথম আলো ট্রাস্টের মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা–বিষয়ক। আজ ৪ নভেম্বর শুক্রবার প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পাঠকদের জন্য নানা আয়োজনের একটি ছিল এটি।

চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ওই তরুণের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তরুণের বয়স ২১ বছর। ঢাকার বাইরে সরকারি একটি মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। জানালেন, প্রথম আলোর পাঠক উৎসবে যোগ দিতে ঢাকা এসেছেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় তাঁর মধ্যে সামাজিক ভীতির বিষয়টি খেয়াল করেন। তিনি লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন না। একধরনের সংকোচ, দ্বিধা, ভয় কাজ করে। তিনি আজ চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র পেয়েছেন।

মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা–বিষয়ক স্টলে অহেতুক ভীতি, শুচিবায়ু, যৌনতা, সম্পর্ক ইত্যাদি নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র নিয়েছেন অন্তত ১৫ তরুণ-তরুণীরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক মোহিত কামাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা আলগিন।

মেডিকেল ছাত্রের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহিত কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ওই তরুণ সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত। সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে কথা বলতে ভীতি বোধ করেন। এটাকে ‘অহেতুক ভীতি’ বলা হয়। এ ধরনের নানা রকম অযৌক্তিক ভীতি নিয়ে অনেকে চলেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় খারাপ করেন। মেডিকেল ছাত্র হওয়ায় ওই তরুণ সহজেই বুঝতে পেরেছেন ভয়টা কী প্রক্রিয়া কাজ করে, মনের ওপর চাপ তৈরি করে।

মোহিত কামাল বলেন, যাঁর যে ধরনের অহেতুক ভীতি রয়েছে, তাঁর সেই ধরনের বিষয়গুলোর সম্মুখীন হয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে। সেটা কীভাবে রপ্ত করতে পারবেন, সেই পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকেরা।

স্টলে এক তরুণী এসেছিলেন শুচিবায়ুর সমস্যা নিয়ে। তিনি বললেন, কোনো জিনিস পরিষ্কার করলেও তাঁর মনে হয় পরিষ্কার হয়নি। দরজায় তালা লাগিয়ে বারবার পরীক্ষা করেন তালা লাগিয়েছেন কি না। বিষয়গুলো তাঁকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে যে তিনি প্রায়ই অনেক কিছু ভুলে যান।

ওই তরুণীকে পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন অধ্যাপক সুলতানা আলগিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের সমস্যাকে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বলা হয়। মানসিক রোগের এ অবস্থাকে বাংলায় ‘শুচিবায়ু’ বলা হয়। তবে শুচিবায়ু বলতে সাধারণভাবে সবাই বোঝেন, পরিষ্কার করার বাতিক, বারবার হাত ধোয়া ইত্যাদি। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। কয়েকজন মেয়ে জানিয়েছেন, মাসিকের সময়ে তাঁদের ঘৃণা লাগার কথা। এই ঘৃণা এমন পর্যায়ে যায় যে লাল রং দেখলেও তাঁরা ঘৃণা করেন। উঠতি বয়সী কিছু তরুণ জানিয়েছেন, তাঁদের হস্তমৈথুন করার অভ্যাসের কথা। অনেকের অযৌক্তিকভাবে যৌনতাবিষয়ক কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। এসবই ওসিডি বা শুচিবায়ু।

অধ্যাপক সুলতানা আলগিন বলেন, ওসিডি সমস্যা থাকলে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটা যে মানসিক সমস্যা, সেটা অনেকে বোঝেন না।

দুই মনোরোগ বিশেষজ্ঞই বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রথম আলোর এ ধরনের আয়োজন অনেক পাঠকের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করেছে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফোরামে মানসিক সমস্যার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত। মানসিক রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। তাই চিকিৎসার জন্য ধৈর্য রাখতে হবে।

এদিকে স্টলে অভিভাবক, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন দিয়ে সাজানো কুইজে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কুইজ জিতে পুরস্কার হিসেবে বই পেয়েছেন ১০০ জন।