Thank you for trying Sticky AMP!!

আমার ইতিহাস অজ্ঞতার দায়শোধ

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন।

হিরণ্ময় ১৯৭১। ৯ মাসের যুদ্ধে রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তার প্রতিটি দিন কেমন ছিল, তা আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তাঁদের পক্ষে অনুমান করা অসম্ভব। অনেক দিন থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি পড়ার ইচ্ছা ছিল। বিভিন্ন কারণে হয়ে ওঠেনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ এই দিনে’ নামে দিনলিপি এবং  ‘বীরের এ রক্তস্রোত’ নামে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে লেখা ছাপানো শুরু করল এবং অনলাইনেও চিরন্তন ১৯৭১ নামে আলাদা বিভাগ করে তথ্যভিত্তিক লেখা প্রকাশ শুরু করল। প্রথম দিন থেকেই পড়া শুরু করলাম। ৭ মার্চ শ্রদ্ধেয় সাজ্জাদ শরিফ স্যার সব কর্মীকে এসব লেখা পড়ার অনুরোধ করে মেইল দিলেন। ১৭ মার্চ স্যার আবার সব কর্মীকে মেইল দিয়ে বললেন, মুক্তিযুদ্ধের এসব লেখার ওপর প্রতি মাসে প্রথম আলো সব কর্মীকে নিয়ে অনলাইন কুইজের আয়োজন করবে! পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি ও বীরের এ রক্তস্রোত পড়তে গিয়ে প্রতিদিনই শিহরিত হয়েছি, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, অলক্ষ্যেই চোখের জলের বাঁধ ভেঙেছে! পরের দিনের লেখা পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ মাসের রক্তস্নাত জার্নি কেমন কষ্টসাধ্য ছিল এবং অভীষ্ট বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাঁদের কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই সত্য ইতিহাস প্রথম আলোর মাধ্যমে পাঠ করেছি।

অপ্রত্যাশিত চমকে আপ্লুত: প্রথম মাসের কুইজে অংশ নিয়েছিলাম কোনো পুরস্কার প্রত্যাশার দুঃসাহস না করেই। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ করে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো অভিনন্দন মেইলে প্রথমেই আমার ছবি ও নাম দেখে খুব অবাক হয়েছি, অবিশ্বাস্যও লেগেছে কিছুটা। কারণ, পুরস্কারপ্রাপ্ত সবার মধ্যে আমি একমাত্র সাধারণ বিভাগের কর্মী। সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক অভিনন্দন, প্রশংসা ও উৎসাহ পেয়েছিলাম। কাজে লেগেছিল সেটাই।  

মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ সব কর্মীকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কুইজ আয়োজন করেছে সাতবার। প্রতিবারই অংশ নিয়েছি, কখনো হয়েছি প্রথম, কখনো তৃতীয় কখনোবা হয়েছি চতুর্থ। শ্রদ্ধেয় ফিরোজ চৌধুরী, তারেক মাহমুদ, শিশির মোড়ল, মো. আসাদুজ্জামান, মো. সামছুর রহমানসহ আরও স্বনামধন্য সাংবাদিকদের পাশে আমার নামও মানবসম্পদ বিভাগের অভিনন্দন মেইলে ছিল! এই অনুভূতি ছিল অসাধারণ! প্রথম আলোয় ১০ বছরের চাকরিজীবনে যাঁদের সঙ্গে কখনো সামনাসামনি দেখা ও কথা হয়নি, তেমন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব সাজ্জাদ শরিফ, লাজ্জাত এনাব মহছি ও সুমনা শারমীন আপাদের মতো ব্যক্তিত্বরা ফোনে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন! সেসব সম্মানিত স্মৃতি হৃদয়ের মণিকোঠায় চির–অমলিন!

স্নেহ সবুজ দিন
তোমার কাছে ঋণ
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের চূড়ান্ত লড়াই মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের নাগরিক হিসেবে সবারই সেই ইতিহাস জানার দায় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের লেখার ওপর প্রথম আলো কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি কিছু পুরস্কার পেয়েছি, যা মূল্যবান, সঙ্গে পেয়েছি কিছু নগদ অর্থও, সেটাও মূল্যবান। কিন্তু অমূল্য যেটা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে জন্মভূমির জন্ম ইতিহাস শিক্ষা! মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সুযোগ পেয়েছি প্রথম আলোর মাধ্যমে। প্রথম আলোর রজতজয়ন্তীর এই উষালগ্নে প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। ইতিহাস অজ্ঞতার দায়শোধে আমাকে সাহায্য করে এমন চির–অম্লান স্মৃতি উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জয়তু প্রথম আলো
শুভ জন্মদিন প্রথম আলো।

মাহমুদুল হাসান
জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (স্টোর, বিতরণ ও প্রশাসন)
প্রশাসন বিভাগ
প্রথম আলো, বগুড়া অফিস