Thank you for trying Sticky AMP!!

সাইকেলে ঝুমুর দাসের ছুটে চলা

সাইকেলে করে সব গ্রাহককে পত্রিকা পৌঁছে দেন ঝুমুর দাস

শ্বশুর পত্রিকার ব্যবসা করতেন। সেই পথেই হাঁটেন তাঁর স্বামী। অসুস্থ হয়ে স্বামী মারা গেলে ব্যবসার হাল ধরেন গৃহবধূ। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পত্রিকা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী—এই নারী ঝুমুর দাস। ব্যবসা করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। স্বামীর নাম জীবন দাস। ঝুমুর তাঁর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে রাজবাড়ী শহরের কলেজপাড়ার রেল কলোনি এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর বাবার বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আশাপুর গ্রামে। এসএসসি পাসের পর ২০০২ সালের ৫ জুন বিয়ে হয় ঝুমুরের।

প্রথম আলোসহ আরও কয়েকটি পত্রিকার এজেন্ট ছিলেন তাঁর স্বামী। বিয়ের বছর দুয়েক পর ২০০৪ সালের ২৩ নভেম্বর সংসারে আসে নতুন অতিথি। ছেলের নাম রাখা হয় অরণ্য দাস। অন্য সাধারণ স্ত্রীদের মতো ঘরের কাজকর্ম করতেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার ঠিকঠাক চলছিল। ভালোভাবেই দিন পার হচ্ছিল। স্বামী ছিলেন সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস।

সুখের সংসারে দেখা দেয় কালো মেঘ। সংসারে ঘটে অঘটন। হুট করে ঝুমুরের স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। একসময় বিছানায় পড়ে যান। অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকেন প্রায় দেড় বছর। তাঁকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৫ জুন তিনি মারা যান।

ঝুমুর দাস বলেন, ‘স্বামীকে বাঁচানোর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। স্বামীর চিকিৎসার জন্য ঢাকাতেই থাকতাম। পত্রিকার কাজ তো থেমে থাকে না। আমার ছেলে পত্রিকা ব্যবসা দেখাশোনা করত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পত্রিকা পৌঁছে দিত। আমার স্বামীর সহকর্মীরাও তাকে সহায়তা করতেন। টুকটাক সমস্যা হলেও মোটামুটিভাবে ব্যবসা চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তিন-চার মাস পরে খেয়াল হলো ছেলে ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না। পত্রিকা বিলি করতে করতে স্কুলে যাওয়ার সময় পার হয়ে যায়। এরপর স্বামীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমি ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসি। ছেলেকে সহায়তা করি। ছেলের কাছ থেকে আমাদের নির্দিষ্ট ক্রেতাদের চিনতে পারি। সমস্যায় পড়লে ফোন করে স্বামীর কাছ থেকে সহায়তা নিতাম।’

ঝুমুর জানান, তিনি প্রথমে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করতেন। আর ছেলে বাইসাইকেলে করে দূরের গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিত। একসময় ঝুমুর একটি লেডিস বাইসাইকেল কিনে ফেলেন। তখন হাতেও খুব একটা টাকা ছিল না। কিস্তিতে বাইসাইকেল কেনেন।

রাতের বেলায় বাড়ির পাশে মাঠে সাইকেল চালানো শিখতেন। ছেলের চেষ্টায় মাসখানেকের মধ্যে সাইকেল চালানো রপ্ত করে ফেলেন। ঝুমুর বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমি সকালে বাড়ি থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে বড়পুল আসতাম। গাড়ি থেকে পত্রিকা নিতাম। এরপর বাজার এলাকায় হেঁটে পত্রিকা বিলি করতাম। একদিন ছেলের জেএসসি পরীক্ষা শুরু হলো। সেদিন পড়লাম অনিশ্চতায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে সাইকেলে করে সব গ্রাহককে পত্রিকা দেওয়া শুরু করলাম। এরপর থেকে বাইসাইকেল আমার নিত্যসঙ্গী।’

ঝুমুর দাস বলেন, তাঁর স্বামী অনেক পত্রিকার এজেন্ট ছিলেন। অসুস্থতার সময় অনেক টাকা ঋণ করতে হয়েছে। তীব্র আর্থিক সংকটের এই মুহূর্তে কয়েকটি পত্রিকা এজেন্টশিপ বাতিল করে দেয়। তবে প্রথম আলো মানবিক কারণে সেটা করেনি। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। করোনার পর থেকে পত্রিকার চাহিদা তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। এখন যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে যায়। ছেলে কলেজে পড়ে। সব মিলিয়ে এখন তিনি ভালো আছেন।

ঝুমুর দাস বলেন, ‘সকালের আলো ফোটার পর বাড়ি থেকে বের হই। কখনোবা বিশেষ করে শীতের সময় আলো ফোটার আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। গাড়ি থেকে পত্রিকা নিয়ে বিলি করা শুরু করি। সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে বাড়িতে এসে সকালের খাবার খাই। এরপর আবার বের হই। দুপুরে বাড়ি আসি। রান্না করি। বিকেলে একটু বিশ্রাম নিই।

সন্ধ্যার আগে বা পরে আবার বের হই। বিলের টাকা তুলি। ছেলেটা এখন কলেজে পড়ে। ধারদেনাও কিছুটা পরিশোধ করেছি। কিন্তু আমার থাকার জন্য নিজস্ব কোনো জমি নেই। রেলের জমিতে ঘর তুলে থাকি। যেকোনো সময় ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে। ঘর তোলার জন্য একটু জমি পেলে খুব ভালো হতো। দিন শেষে রাতে নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারতাম।’