Thank you for trying Sticky AMP!!

অক্টোবরে আসছে ওয়াটার বাস

অক্টোবরে চালু হচ্ছে ওয়াটার বাস। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে বানানো হয়েছে টার্মিনাল। গত রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় নেভাল রোডে। প্রথম আলো

যানজট থেকে স্বস্তি দিতে বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নগরের সদরঘাট ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের টার্মিনালের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। অক্টোবর নাগাদ সদরঘাট–পতেঙ্গা ১৫ নম্বর (বিমানবন্দর) নৌপথে ওয়াটার বাস চালু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নৌপথে ওয়াটার বাস চালু হলে ২০ থেকে ২২ মিনিটের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা যাবে। সদরঘাট থেকে নদীপথে বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর বুক চিড়ে চলবে ওয়াটার বাস। এ জন্য ড্রাইডকের সঙ্গে চুক্তি হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের। ড্রাইডক ওয়াটার বাস নির্মাণের জন্য জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। অক্টোবর নাগাদ ওয়াটার বাস চালুর ব্যাপারে আশাবাদী ড্রাইডক।

ড্রাইডকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর নাজমুল করিম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে চারটি ওয়াটার বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড তিনটি তৈরি করেছে। অন্যটিও তৈরি হচ্ছে।

কমোডর নাজমুল করিম আরও বলেন, সদরঘাট ও বিমানবন্দরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ওয়াটার বাস চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট এলাকায় ড্রেজিং করতে হবে। সেই কাজটাও হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবরের মধ্যে ওয়াটার বাস চালু করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রামের মূল নগর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি মোড়ে মাত্রাতিরিক্ত যানজটে পড়া যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে বিকল্প হিসেবে নদীপথে ওয়াটার বাস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশেষ করে নগরের বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা এবং সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। এ ছাড়া স্টিল মিল বাজার হয়ে বিমানবন্দর সড়কেও যানজট লেগে থাকে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ১৭ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের মতো। এক বছরের ব্যবধানে যাত্রী বাড়ল ২ লাখ বা প্রায় ১২ শতাংশ। চলতি বছরে যাত্রী ওঠা–নামা আরও বাড়বে বলে বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রটি জানিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহের রোববার, সোমবার ও বৃহস্পতিবার যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। এতে জিইসি থেকে বিমানবন্দরের ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। তবে স্বাভাবিক সময়ে দেড় ঘণ্টা লাগছে। শুক্র ও শনিবার ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লাগে। কারণ, ওই দুই দিন বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী গাড়ি কম বের হয়। এ জন্য যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ২০–২২ মিনিটে গন্তব্যে যেতে পারলে অনেক সময় বাঁচবে। তবে সদরঘাটে যাতায়াতে সড়কটি যানজটমুক্ত থাকবে কি না ভাবতে হবে। সদরঘাট যেতে যদি ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায় তাহলে উদ্যোগটির সুফল পাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ওয়াটার বাসের ভাড়াও একটি বড় বিষয়। ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে থাকলে ওয়াটার বাস জনপ্রিয় হবে। ব্যতিক্রম কিছু হলে যাত্রী পাওয়া যাবে না।

প্রাথমিকভাবে ৩০ আসনের দ্রুতগতির চারটি ওয়াটার বাস নামানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে বন্দর সূত্র জানায়। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণ হয়নি। তবে প্রতিটি আসনের ভাড়া ৪০০ টাকা হতে পারে বলে আলোচনা আছে। বিপুল অঙ্কের টাকা ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা ওয়াটার বাসে চড়বে কি না সন্দেহ আছে। কারণ ৫০০–৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি উবারে বিমানবন্দরে যাওয়া যায় কিংবা বিমানবন্দর থেকে মূল নগরে ফেরা যায়।

ড্রাইডকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর নাজমুল করিম বলেন, ওয়াটার বাসের যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, ওয়াটার বাস ব্যবহারের জন্য টার্মিনাল ভাড়া বছরে ৭০ লাখ টাকা দিতে হবে। পতেঙ্গার ১৫ নম্বর এবং সদরঘাট টার্মিনাল বন্দর কর্তৃপক্ষ করে দিচ্ছে। পাঁচ বছর পর্যন্ত একই নিয়মে ৭০ লাখ টাকা করে ভাড়া পাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ছয় বছর পর থেকে ভাড়া ২৫ শতাংশ হারে বাড়বে। টার্মিনালের ভাড়া বাড়লে যাত্রী ভাড়াও বাড়বে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াটার বাস তৈরির জন্য চট্টগ্রাম ড্রাইডককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বিমানযাত্রীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিবছর ৭০ লাখ টাকা হারে ভাড়া দিতে হবে।

মো. ওমর ফারুক আরও বলেন, আগ্রাবাদ, নিমতলা, ইপিজেড হয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার মূল সড়কটিতে মাত্রাতিরিক্ত যানজট লেগে থাকে। এ মুহূর্তে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা কঠিন। বে টার্মিনাল নির্মাণের আগে বন্দরমুখী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চলাচল কমানো সম্ভব নয়। তাই সরকার বিকল্প হিসেবে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের সুবিধার্থে ওয়াটার বাস চালানোর উদ্যোগ নেয়।