Thank you for trying Sticky AMP!!

অটিস্টিক উদ্যোক্তাদের গল্প

অটিস্টিক ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। কাজে স্বাধীনতা ও একটু ছাড় দিলে তারাও ভালো করতে পারে।

অটিস্টিক ব্যক্তি রাইসার তৈরি শস্যদানার ওয়ালমেট

বিভিন্ন শস্যদানা দিয়ে ওয়ালমেট বানাচ্ছেন রাইসা। দেড় বছর ধরে তিনি মায়ের সহায়তায় এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। রাইসার মা আসমা রেজা বললেন, বাসায় বিভিন্ন শস্যদানা সংগ্রহ করেন। বাজার থেকেও কিনে আনেন। মেয়েকে ডিজাইন বা নকশা রং–পেনসিল দিয়ে রং করে দেন, অনেক সময় একটু বুঝিয়ে দিলেও মেয়ে বুঝতে পারে, সে অনুযায়ী কাজটি শেষ করে। তারপর বিশেষ রাসায়নিক দিয়ে ফ্রেম করে তা বাঁধিয়ে ক্রেতার কাছে পাঠানোর কাজগুলো করে দিতে হয়। একেকটি ওয়ালমেট তিন হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। রাইসা গত তিন মাসে যা উৎপাদন করেছেন, তা প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাইসা একজন অটিস্টিক ব্যক্তি। মায়ের সহায়তায় পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তিনি এখন একজন উদ্যোক্তাও। হিসাব–নিকাশ হয়তো বুঝতে পারেন না, সঞ্চয় বা ক্রেতা সামলানোর কাজও পারেন না। তারপরও এই কাজের মধ্য দিয়ে রাইসা নিজে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারছেন, আবার আয়ও হচ্ছে।

শুধু রাইসা নন, পরিবারের সহায়তায় অটিস্টিক ব্যক্তিদের অনেকেই অনলাইনে ব্যবসা করছেন। বিশেষ করে গত বছর মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অটিস্টিক শিশু ও ব্যক্তিরা ঘরে আটকে আছেন। আর এ সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

আজ ২ এপ্রিল দেশে পালিত হচ্ছে ১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মহামারি–উত্তর বিশ্বে ঝুঁকি প্রশমন: কর্মক্ষেত্রে সুযোগ হবে প্রসারণ’। তবে অটিস্টিক ব্যক্তিদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ প্রসারিত করতে এখন পর্যন্ত শুধু পরিবার বা কিছু সংগঠন এগিয়ে এসেছে। পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে টেকসই সমাধান চান আর ২২ বছর বয়সী পশলা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ১০টি শাড়ির অর্ডার পেয়েছেন। তিনি মা নাজনীন আখতারের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। পশলা বাচ্চাদের কাপড় বানিয়ে তাতে কার্টুন আঁকতে বেশি পছন্দ করেন। এ ছাড়া শাড়িতে ডিজাইন করা, গয়না বানানোর কাজগুলোও করেন। মূলত তাঁর পরিচিতজনেরাই পণ্যগুলো কিনে নেন।

পশলার মা নাজনীন আখতার বললেন, অটিস্টিক বাচ্চাদের কাজ শেখানো অনেক কঠিন কাজ। মেয়েকে একটি জামার মাপ বা কাপড় কাটার পর আকৃতি কেমন হয়, তা শেখাতে ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। এখন তাঁর নিজের একটি ক্যাটালগ আছে।

নাসরীন আহমেদের স্বামী মারা গেছেন ছয় বছর আগে। ২১ বছর বয়সী যমজ অটিস্টিক মেয়ে অনন্ত ও দুরন্তকে নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছেন তিনি। নাসরীন আহমেদ বললেন, মেয়েদের মন–মেজাজ ভালো থাকলে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়৷ একেকটি শাড়িতে ডিজাইন করতে সময় লাগে, পরিশ্রম লাগে। তবে সব ক্রেতা কাজের দামটা সেভাবে দিতে চান না।

অটিস্টিক উদ্যোক্তারা ফেসবুক গ্রুপ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরামে (উই) পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, উই গ্রুপে মা বা পরিবারের সহায়তায় বেশ কয়েকজন অটিস্টিক উদ্যোক্তা আছেন। এই উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তা ও অনুদান প্রয়োজন।

২০১৩ সালে সরকার নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন করেছে। এ আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাস্টের কাছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থান বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা কোনো কিছুর আবেদন করেনি। ফলে এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনো।

অটিজমসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সংগঠন পিএফডিএ-ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজিদা রহমান নিজের প্রতিষ্ঠান এবং একজন অটিস্টিক ছেলের মায়ের অভিজ্ঞতায় বলেন, অটিজমসম্পন্ন ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকা অনেক কঠিন একটি বিষয়। উদ্যোক্তা মানে শুধু পণ্য উৎপাদন নয়। বাজার, ক্রেতা সামলানোসহ অনেক বিষয় এতে জড়িত। তাই আগে পরিবারগুলোকে সংগঠিত হতে হবে। সরকারকে আইন বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিতে হবে।