Thank you for trying Sticky AMP!!

অন্যের বকেয়া বিলে দিনমজুর কারাগারে

>
  • ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়
  • গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম আবদুল মতিন মিয়া
  • মতিনের বাড়ি মোচাগড়া গ্রামে, তিনি দিনমজুর
  • দিনমজুর মতিন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন
  • ঘটনার তীব্র সমালোচনায় মানবাধিকার সংগঠন
আবদুল মতিন মিয়া

নিজে দিনমজুর। তাঁর নামে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে, জানেনও না। তবে তাঁর নামে সংযোগ নিয়ে চালান আরেকজন। সেই ব্যক্তির বিদ্যুতের বিল বাকি পড়েছে ৪ হাজার ৭ টাকা। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় গত মঙ্গলবার ওই দিনমজুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। নিন্দার মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। কমিটিকে আজ শুক্রবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনা ঘটেছে মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম আবদুল মতিন মিয়া (৫০)। তাঁর বাড়ি মোচাগড়া গ্রামে। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, চার বছর আগে মোচাগড়া গ্রামের ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুতের সংযোগের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কাছে আবেদন করে। তখন পরিবারগুলোর কাছ থেকে গ্রামের দুই ব্যক্তি মিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নেন। আবদুল মতিন চার হাজার টাকা দেওয়ার পর আর দিতে পারেননি। এরপরও ২০১৫ সালের ২২ মার্চ তাঁর নামে সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এর মিটার বসানো হয় মতিনের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা সফিকুল ইসলামের ঘরে। এরপর থেকে সফিকুল বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন। একপর্যায়ে তাঁর ১৭ মাসের বিদ্যুতের বিল বাকি পড়ে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ বিল পরিশোধের জন্য নোটিশ দেয়। কিন্তু কেউ এতে সাড়া দেননি। পরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই সঙ্গে বকেয়া টাকার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে মামলা করেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১–এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক লক্ষণ চন্দ্র পাল। এ মামলায় আবদুল মতিন মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গত মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক কবির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গত বুধবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানতে চাইলে আবদুল মতিন মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, ‘স্বামী গ্রেপ্তারের পর জানলাম, আমাদের নামে মিটার হয়েছে। আমাদের বকেয়া বিল জমা পড়েছে। আমরা কোনো নোটিশও পাইনি। কারা এর পেছনে আছে, তাদের বের করা হোক। আমার নিরপরাধ স্বামীর মুক্তি চাই।’

ওই ঘটনা জানাজানি হলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা করে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, কারা ওই সংযোগ দিল, কীভাবে দিল, এতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের গাফিলতি আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে।

ঘটনাটির তদন্তে গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান দুই সদস্যের কমিটি করেছেন। দেবীদ্বার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি চৌধুরীকে এর আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, সফিকুল বিষয়টি অফিসকে জানাননি। মতিনের নামে নোটিশ জারি করা হলেও তিনি সেটি আমলে নেননি। এ কারণে এমনটা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল সফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কাদের গাফিলতি ছিল, কারা এর পেছনে রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।