Thank you for trying Sticky AMP!!

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি মোকাবিলায় সেনাসদস্যদের সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ছবি: বাসস

দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত থেকে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

ঢাকা সেনানিবাস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সেনানিবাসে ক্যানসার সেন্টার, ফার্টিলিটি সেন্টার, এডিবল অয়েল মিল এবং বিভিন্ন সেনানিবাসে সেনাসদস্যদের জন্য ব্যারাক, সেনাছাউনি, প্রশিক্ষণ ও আবাসন প্রকল্পগুলো। এ সময় তিনি বলেন, ‘পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘দেশের সম্পদ’ এবং দেশের মানুষের ‘ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই পেশাদারত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং কল্যাণময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বলে আমি আশা করি।’

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সেনাসদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সরকার সর্বদাই জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, শাসক হিসেবে নয়—এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সেবা করার জন্য আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি।’ তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে—এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলা দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে করি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন রয়েছে। তাঁর দুই ভাই শহীদ শেখ কামাল এবং শহীদ শেখ জামাল সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তাঁর ছোট ভাই শেখ রাসেল পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিল। কাজেই পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী করে সেনাবাহিনী গড়ে তোলাকে আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। এ ছাড়া তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।

একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর—এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং কিছুসংখ্যক ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নকে প্যারা ব্যাটালিয়ন এবং মেকানাইজড ব্যাটালিয়নে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস এবং মিসাইল রেজিমেন্ট। তিনি বলেন, আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি গান এবং মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে “অপারেশন থান্ডারবোল্ট ও অপারেশন টোয়াইলাইট”-এর মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং গুলশানের হলি অর্টিজান বেকারিতে জিম্মি নাটকের অবসানে সেনাবাহিনী যোগ্যতার যে স্বাক্ষর রেখেছে, তা দেখে আমি অত্যন্ত গর্বিত।’

দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত দুপুরে ভাত খাননি প্রধানমন্ত্রী
সেনাসদস্যদের রেশন, বেতন স্কেল ও বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর একদিন সেনাসদস্যদের দরবারে এসে দুপুরে ভাতের পরিবর্তে রুটি দেওয়ার কথা জানতে পারি। সেদিন সেনাসদস্যরা রুটির পরিবর্তে ভাতের দাবির জানান। ১৯৯৮ সালে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলে পাকিস্তান আমলে চালু রুটির পরিবর্তে দুপুরে ভাতের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের ব্যবস্থা করেছি। যত দিন সেটা করতে পারিনি, তত দিন আমিও দুপুরে ভাত খাইনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি। এর আগে আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। সীমান্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি।’ তিনি বলেন, ‘জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।