Thank you for trying Sticky AMP!!

অভয়ারণ্যেও ইলিশের দেখা মেলা দায়

ইলিশের ভরা মৌসুম। নদীর নির্দিষ্ট এলাকায় জাল ফেললেই ইলিশের দেখা মেলার কথা। কিন্তু পটুয়াখালীর নদ-নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। এমনকি ইলিশের অভয়ারণ্য ১০০ কিলোমিটার তেঁতুলিয়া নদীতেও সেভাবে ইলিশের দেখা মিলছে না। জালে যা ধরা পড়ছে তা গত মৌসুমের তুলনায় খুবই কম। এদিকে মৌসুমের তিন মাস চলে গেলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন পটুয়াখালীর জেলেরা।

ইলিশের আহরণের মৌসুম শুরু হয় জুন থেকে। চলে অক্টোবর পর্যন্ত। এই ইলিশ ধরা মৌসুমে নদ-নদীর জেলেরা জেলার পায়রা, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক, বুড়িগৌরাঙ্গ, তেঁতুলিয়া নদীতে জাল ফেলে রুপালি ইলিশের দেখা পেতেন। জেলেদের জীবন জীবিকা নির্বাহের অন্যতম বড় ভরসা এই মৌসুমের ইলিশ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর পটুয়াখালীর নদ-নদীতে ইলিশের আহরণ মৌসুমের জুন, জুলাই ও আগস্টে আহরিত হয়েছিল ১০ হাজার ৩৫১ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু চলতি মৌসুমের প্রথম তিন মাসে ইলিশ আহরিত হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন। গত বছরের মৌসুমের চেয়ে এই বছর মৌসুমে প্রথম তিন মাস মোট ২ হাজার ৮১৯ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন ইলিশ কম ধরা পড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ইলিশ ধরার জেলে রয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে নদ-নদীতে ইলিশ ধরে ২৫ হাজার ১৭৩ জন।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ইলিশ ধরা পরলেও নদ-নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পরায় জেলেরা হতাশ। জেলেরা বলেন, পটুয়াখালীতে তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়ারণ্য। ইলিশের নির্বিঘ্নে প্রজনন নিশ্চিতকল্পে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই ১০০ কিলোমিটার তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মৎস্য বিভাগ থেকেও এই অভয়ারণ্যে ব্যাপক নজরদারি থাকে। ইলিশ ধরার ভরা মৌসুমেও এই অভয়ারণ্যে প্রচুর ইলিশ ধরা পরে। কিন্তু এ মৌসুমে জেলেদের জালে খুব কমসংখ্যক ইলিশ ধরা পড়ছে।

গতকাল বুধবার সকালে যাওয়া হয় পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীপাড়ের সৈয়দ জায়র গ্রামে। সেখানকার জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ার হতাশা ব্যক্ত করেন।

সৈয়দ জায়র গ্রামের জেলে আখের আলী খা (৪৫) বলেন, তিনি ছেলে সোহেলকে (২০) নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকার করে সংসার চালান। কিন্তু এ বছর ইলিশ আশানুরূপ ধরা না পরায় এনজিওগুলোর কিস্তি ও মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধে তিনি চিন্তিত।

ওই গ্রামের জেলে মোস্তফা ফকির (৪৫) জানান, ‘মৌসুমের শুরুতে ইলিশ ধরার জন্য প্রস্তুত হতে স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে নৌকা জাল তৈরি করেছি। মৌসুমে ইলিশ ধরে বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করি।’ কিন্তু নদীতে ইলিশ না মেলায় কীভাবে ধার-দেনা শোধ করবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তার দিন কাটছে তাঁর।

উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি সিকদার নজরুল ইসলাম বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম কিন্তু নদীতে ইলিশ তেমন একটা ধরা পরছে না। দুই-একজন দুই-একটা ইলিশ ধরতে পারলেও তা বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করতে পারছেন না। নভেম্বরে প্রজনন মৌসুমের আগেই নদীতে ইলিশের দেখা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পটুয়াখালীর সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে। বর্তমানে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় ইলিশ পেতে দেরি হচ্ছে। তবে এই মৌসুমেই নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে এবং জেলেরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. লোকমান আলী বলেন, মৌসুমের তিন মাস চলে গেলেও ইলিশ তেমন না পাওয়ায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রাকৃতিক নিয়মের ওপরই নির্ভর করতে হবে। মনে হচ্ছে, সামুদ্রিক প্রতিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তনের ফলে ইলিশের প্রজনন ও ধরার মৌসুমে বড় ধরনের পরিবর্তনের লক্ষণ এটা।

লোকমান আলী আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের ঋতুগুলোতেও আলাদা বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রভাবে মৌসুমের আগ-পিছ হচ্ছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত ও পানি বাড়তে শুরু করলে ইলিশের প্রাচুর্য বাড়বে।’