Thank you for trying Sticky AMP!!

আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী যেন বিতর্কিতদের ছায়া

শাহীন আক্তার ,আতাউর রহমান খান
>
  • কক্সবাজার-৪ আসনে আ. লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তার বর্তমান সাংসদ বদির স্ত্রী। 
  • টাঙ্গাইল-৩-এ দলটির প্রার্থী সাংসদ আমানুরের বাবা আতাউর রহমান খান।

‘এমপি বদির সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। ৩০ তারিখ সারা দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচার শুরুর প্রথম দিন গত সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছিল এভাবে। এ যেন স্থানীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা। কিন্তু কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদি নন, তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার।

আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী আতাউর রহমান খান লড়ছেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে। তিনি ওই আসনের বিতর্কিত বর্তমান সাংসদ আমানুর রহমান খানের (রানা) বাবা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে আতাউর রহমান ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন নিজের ছেলেদের অনুসারীদের নিয়েই। কেউ কেউ বলছেন, এই আসনে আমানুরের সমর্থকেরাই যেন সরকারি দল, আর খোদ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার ও টাঙ্গাইলের এই দুই আসনের ভোটারদের অনেকের মতে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেন বিতর্কিতদেরই ছায়ায় পরিণত হয়েছেন। প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে বিতর্কিতরা হয় নিজেই, নতুবা কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ, মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে কক্সবাজার-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি সাংসদ বদি। তবে তাঁর স্ত্রী মনোনয়ন পাওয়ায় কোমর বেঁধে প্রচারণায় নেমেছেন এই সাংসদ। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, বদি ও তাঁর স্ত্রী, মানে একই কথা। তা না হলে বদি কেন নির্বাচনের মাঠে?

স্ত্রী শাহীন আক্তারের পক্ষে সাংসদ বদি কেবল মাঠঘাটই চষে বেড়াচ্ছেন না, তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রতীকও বুঝে নিয়েছেন। সোমবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের কাছ থেকে স্ত্রীর পক্ষে সমর্থনকারী হিসেবে তিনি নৌকা প্রতীক বুঝে নেন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার আগে কোনো সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাই শেখ হাসিনার নির্দেশমতো দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয় করতে কাজ করবেন সবাই। পাশাপাশি তাঁর স্বামীও স্ত্রীর পক্ষে দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী অভিযোগ করেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদির স্ত্রী। তাঁর পক্ষে বদি প্রতিবাদ সভার নামে এ পর্যন্ত ২০-২৫টি নির্বাচনী জনসভা করেছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সাংসদ বদির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামী স্ত্রীর পক্ষে কাজ না করে কি পরপুরুষের পক্ষে কাজ করবে? স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আসনটিতে আমি একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছি। আমার পক্ষে জনস্রোতে বিএনপির প্রার্থী দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।’

এদিকে টাঙ্গাইল-৩ আসনে (ঘাটাইল) আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় সাংসদ আমানুর, তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার অভিযোগসহ নানা কারণে এবার এই আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর বাবা আতাউর রহমান খান। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পরই তাঁর ছেলেদের আত্মগোপনে থাকা অনুসারীদের অনেকে এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। এই আসনের সাংসদ আমানুর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফারুক হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তারপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র বলেছে, আতাউর রহমান খান তাঁর ছেলের অনুসারীদের নিয়েই নির্বাচন করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তাঁর নির্বাচনে টাঙ্গাইল শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদেরও দেখা যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ঘাটাইলের প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অনুমোদিত কমিটি রয়েছে। কিন্তু আতাউর রহমান সেই কমিটিকে বাদ দিয়ে তাঁদের অনুসারীদের দিয়েই বিভিন্ন কেন্দ্র কমিটি করছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়ায় তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন হচ্ছেন। দল নয়, ছেলের সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচন করছেন আতাউর রহমান।