Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে শীর্ষ বৈঠক হতে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। তবে এই বৈঠক সামনাসামনি হচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনাটি হবে ভার্চ্যুয়ালি।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে করোনা-পরবর্তী সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ দুই নিকট-প্রতিবেশীর সম্পর্কের নানা দিক আলোচনায় আসবে।

বৈঠকের আলোচ্যসূচির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যতগুলো বড় বড় ইস্যু আছে, সব ইস্যুই আমরা বৈঠকে তুলব। পানি সমস্যা, সীমান্তে অনিশ্চয়তাসহ সব কটি ইস্যুই তুলে ধরব।’ এই শীর্ষ বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার রাতে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দুই শীর্ষ নেতা করোনা-পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করবেন। করোনা মহামারিতে দুই নেতা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ওই সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি।

এবারের শীর্ষ বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বরাবরের মতোই ঢাকার দিক থেকে নানা ধরনের বাধা দূর করে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো, সীমান্ত হত্যা বন্ধের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সীমান্ত নিশ্চিত করা এবং অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়গুলোয় জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের অশুল্ক বাধা এখনো রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘রুলস অব অরিজিন’-এর মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশ তুলবে। বাগেরহাটের মোংলা আর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতের বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এসব এলাকায় কাজ শুরুর তাগিদ থাকবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

গত এক দশকে দুই দেশের সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত এবং গভীর হলেও সীমান্ত হত্যা এখনো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ‘পথের কাঁটা’ হিসেবে রয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্তে অন্তত ৪২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এমনকি গতকাল বুধবার ভোরেও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক তরুণ নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীমান্তে হত্যা অব্যাহত থাকাটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকারের বিষয়টি ভারতকে আবার মনে করিয়ে দেওয়া হবে।’

অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা চুক্তি যে আপাতত হচ্ছে না, এ ব্যাপারে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। তবে তিস্তার কারণে অন্য নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি যাতে আটকে না থাকে, এবারের শীর্ষ বৈঠকে এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দিল্লির কূটনীতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে ভারতের অন্যতম অগ্রাধিকার থাকতে পারে ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি আনা। ২০১০ সালে শুরু হওয়া ঋণ চুক্তির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি যথেষ্ট মন্থর। এ নিয়ে গত দুই বছর আলোচনা হচ্ছে। ভারতও প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনা উচিত বলে মনে করে। তাই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গটি আসতে পারে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায়।

চার চুক্তি সই ও তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন

দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠকটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায়। এর দুই ঘণ্টা আগে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এর মধ্যে রয়েছে হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, বরিশালে প্রকল্প স্থাপন ও হাই ইমপেক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল আলোচনার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ একটি স্মারক ডাকটিকিটের উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের ডাক বিভাগ ডাকটিকিটটি বের করেছে। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর’-এর প্রমো দেখানো হবে। আগামী বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ডিজিটাল জাদুঘরের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর জীবন আর কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই জাদুঘর প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পাঁচটি এবং ভারতের পাঁচটি শহরে দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া উদ্বোধন করা হবে ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলসংযোগ। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ওই রেলপথ ধরে এক দেশ থেকে অন্য দেশের গন্তব্যে যাবে ট্রেন।

দুই দেশের অগ্রাধিকার

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তা পিছিয়ে যায়। ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানাবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ১৭ মার্চ বা ২৬ মার্চ ঢাকায় আসতে পারেন মোদি।

এবারের বৈঠকের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হওয়া জরুরি। কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই সময়ে ভার্চ্যুয়াল আলোচনার বিষয়টি ইতিবাচক। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যার মধ্যে অন্যতম পানি বণ্টনের বিষয়টি। তিস্তার বিষয়টি ‘কোল্ড স্টোরেজে’ (হিমাগার) চলে গেছে। অন্য সাতটি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে এ মুহূর্তে খুব বেশি বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এই নদীগুলোর বিষয়ে সুরাহা হয়ে গেলে তখন সব মনোযোগ তিস্তায় দেওয়াটা সহজ হতে পারে। আর ব্যবসার ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা দূর হলেই ভারতে বাংলাদেশের পণ্যে সয়লাব হয়ে যাবে, এমনটা মনে করার কারণ নেই। কারণ, রপ্তানির ঝুড়িতে পণ্যের সংখ্যা সীমিত। তবে এটাও ঠিক, অশুল্ক বাধা দূর হলে হয়তো বাংলাদেশের উৎপাদনকারীরা ভারতের বাজারকে কেন্দ্র করে পণ্য উৎপাদনের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে পারেন।

সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে দুটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলা উচিত। প্রথমত, ভারতকে বলতে হবে শুধু মুখের কথাই নয়, রোহিঙ্গারা যাতে রাখাইনে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য তারা কার্যকর ভূমিকা নেবে, যা এখন পর্যন্ত ভারত করেনি। দ্বিতীয়ত, ভারতকে স্পষ্ট করে বলার সময় এসেছে, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। লোকজনকে গুলি করে হত্যার পর বাজে অজুহাত দেওয়া হয়। বাংলাদেশের লোকজন আর এটা নিচ্ছে না। কথাটা ভারতকে স্পষ্ট করেই বলতে হবে।’