Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ দ্বার খুলবে সকাল আটটায়

বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা

কালো পাড়ের সাদা শাড়িতে নারী আর সাদা-কালো বর্ণখচিত পাঞ্জাবিতে পুরুষ। শহীদ মিনারখচিত তুলতুলে গালের শিশুটি। সবার পথ এসে আজ মিলে যাবে শহীদ মিনারের সোপানে। আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই সেই পথে আঁকা শুরু হয়েছিল নানা রঙের নকশা। আজ ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালি আসবে তার মায়ের ভাষাকে সম্মান জানাতে। যে বীর সন্তানেরা এই শিমুল-পলাশ ফোটার দিনে বুকের তাজা রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন রাজপথ, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।
গতকাল সন্ধ্যা নামতেই দেখা গেল গ্রন্থমেলামুখী জনস্রোত। ওই সময় পরিবেশটাও ছিল একটু আলাদা। পথে পথে আলপনা আঁকার ব্যস্ততা। শিশু একাডেমীর সামনে এবং শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানিরা ব্যস্ত ফুলের মালা ও স্তবক তৈরি নিয়ে। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় আত্মদানকারী অগ্রজদের পুণ্যস্মৃতিতে সেসব আজ নিবেদন করা হবে বিনম্র শ্রদ্ধায়। বুকভরা বেদনা আর অহংকার নিয়ে বাঙালি গাইবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী...।’
আজ মেলা শুরু হবে সকাল আটটায়
আজ শুক্রবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বার খুলে দেওয়া হবে সকাল আটটায়। বন্ধ হবে রাত সাড়ে আটটায়। অন্যবারের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, এই সাড়ে ১২ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তই মেলায় থাকবে মানুষের ঢল। এ ছাড়া আজকের দিনটিকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি হাতে নিয়েছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় বসবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। বিকেলে ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে মানবতাবাদ’ শীর্ষক একুশে স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
যানজটের দুর্ভোগে বইপ্রেমীরা
মেলার দুটি অংশ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন একাডেমি চত্বর আর উদ্যানে যাতায়াত করতে হয় মেলায় আগতদের। সাধারণত বেলা তিনটার পর টিএসসি চত্বর থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু যাতায়াত করতে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রন্থানুরাগীদের ভয়ানক দুর্ভোগে পড়তে হলো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে গাড়িগুলো যাতায়াত করছিল। কিন্তু বিকেল থেকেই দোয়েল চত্বরের সামনের পথ বন্ধ করে খুলে দেওয়া হলো বাংলা একাডেমির সামনের পথটি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে জনতা শহীদ মিনারে আসবে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে, তাই এ ব্যবস্থা। এদিকে বইমেলার সামনের পথ ও ফুটপাত দখল করে রেখেছেন পাইরেটেড বই আর বারোয়ারি পণ্যের বিক্রেতারা। এ ছাড়া বাস, রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ির বহরে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন
মেলার ২০তম দিনে নজরুল মঞ্চে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ১১টি বইয়ের মোড়ক। এর মধ্যে শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বিএনপি নেতা লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিকেলে মোস্তফা মল্লিকের রক্তাক্ত পিলখানা: অপ্রকাশিত কথা অপ্রকাশিত ছবি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সৈয়দা সাজেদা সাজুর তবুও স্বর্ণলতা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মেলায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে শাহীন আখতারের ময়ূর সিংহাসন । বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার মেলার ২০তম দিনে নতুন ১০৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। নতুন বইয়ের তালিকায় আছে মফিদুল হকের বাংলাদেশের মুক্তিসাধনা টুকরো কথার ঝাঁপি বিদ্যাপ্রকাশ, সোহরাব হাসানের ১৯৭১: বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র নবযুগ, জহির আশফাকের পূর্বলক্ষণের দিনে আগামী, বিশ্বজিৎ ঘোষের অশেষ রবীন্দ্রনাথ নান্দনিক, আখতারুজ্জামান চৌধুরীর নুহাশপল্লী এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ অন্যপ্রকাশ, রিয়াজ আহমদের চুড়ি পরো আয়না দেখো না পারিজাত ইত্যাদি।
মায়াবী এক চন্দ্রমুখী
চন্দ্রের মতো মুখ বলেই কি না সাংবাদিক দম্পতি মুকুল-তন্বী মেয়ের নাম রেখেছিলেন চন্দ্রমুখী। মেয়ে হারানোর শোকে মা নাজনীন আখতার তন্বী ঝাঁপ দিলেন পাঁচতলা থেকে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ফিরে আসা এই মা এখনো চিকিৎসাধীন। ছোট্ট এই মেয়ের মৃত্যু কাঁদিয়েছিল বাংলাদেশের বহু মানুষকে। সেই কান্নার জল লেখার আখরে প্রকাশ করেছে বাংলাপ্রকাশ। খ্যাতিমান লেখকদের লেখার সংকলন মায়াবী এক চন্দ্রমুখী সম্পাদনা করেছেন ধ্রুব এষ, হুমায়ুন কবির ঢালী, ওবায়দুল গনি চন্দন এবং চন্দ্রমুখীর বাবা রকিবুল ইসলাম মুকুল।
মেলা মঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, আকরামুল ইসলাম প্রমুখ।