Thank you for trying Sticky AMP!!

আত্মতুষ্টিতে ভুগলে বিপদের আশঙ্কা

মুশতাক হোসেন

সংক্রমণ কমে যাচ্ছে, এই আত্মতুষ্টিতে ভুগলে বিপদের আশঙ্কা আছে। কারণ, যেসব দেশ এই আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে, তাদেরই সংক্রমণ এবং ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। ঈদুল আজহার পর কোনো দিন সংক্রমণ বাড়ছে, কোনো দিন কমছে। এমন অবস্থা বহাল থাকলেও নিশ্চিন্ত থাকা যায় না।

দিনে গড়ে ২০ হাজার পরীক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। পরীক্ষা কিছুটা বাড়ছেও। আশা করি এটি আরও বাড়বে। করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য ল্যাব বাড়ছে। লোকবলও বেড়েছে। এখন রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। যাঁদের করোনার পরীক্ষা করা দরকার, তাঁদের সেটা করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্নকরণ), কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করতে হবে।

লক্ষণ দেখেই আইসোলেশন করতে হবে। এটি হয় বাসস্থানে, না হয় সরকারি ব্যবস্থায় করতে হবে। কিন্তু এই কাজ করা প্রান্তিক মানুষদের জন্য সমস্যা। কারণ, তাঁদের কে খাওয়াবে? তাঁদের কাজের কী হবে? এ জন্য দেখা যাচ্ছে, অনেকের লক্ষণ থাকলেও পরীক্ষা করাতে চান না। প্যারাসিটামল খেয়ে কাজে চলে যাচ্ছেন। আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনের সরকারি ব্যবস্থা থাকলে প্রান্তিক মানুষেরা নিশ্চিত হতে পারতেন। এতে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হতো, পাশাপাশি চাকরি হারানোরও ভয় থাকত না।

সংক্রমণ রোধে রোগী শনাক্তের জন্য পরীক্ষা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ করে ঢাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সক্রিয়ভাবে রোগী শনাক্তের কাজটি হচ্ছে না। অথচ এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন, তার অর্ধেকই ঢাকায়। তাই ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন চিকিৎসক নিয়োজিত করতে হবে, যাঁর নেতৃত্বে এসব কাজ হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যবিধি মানা। এ বিষয়ে কেবল উপদেশ দিলে হবে না। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা কষ্টসাধ্যও। কারণ, মাস্ক কেনা, সাবান কেনা ইত্যাদি বিষয় আছে। এ জন্য প্রান্তিক মানুষদের জন্য বিনা মূল্যে মাস্ক দিতে হবে। তাঁদের বাসস্থান ও কর্মস্থলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে—কেবল এই কথা বললে হবে না, মানার জন্য সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এখানেও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেলাই মেশিন সরবরাহ করে প্রান্তিক নারীদের দিয়ে মাস্ক তৈরি করে সরকার সেগুলো কিনে বিতরণ করতে পারে। কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে যে ভালো ফল পাওয়া যায়, তা কিন্তু ঢাকার টোলারবাগ, পূর্ব রাজাবাজার, ওয়ারী ও মাদারীপুরের শিবচরে দেখা গেছে।

মনে রাখতে হবে, বিশ্ব পরিসরের বিবেচনায় বাংলাদেশে এখনো সংক্রমণের হার উঁচু। হঠাৎ করে সংক্রমণ আরও ঘনীভূত হতে পারে। এ জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না নামলে বলা যাবে না সংক্রমণ কমেছে। এক মাস নিবিড়ভাবে কাজ করলে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব। স্বাভাবিক পরিস্থিতি না আসা পর্যন্ত একবিন্দু ছাড় দেওয়া যাবে না। কারণ, করোনাভাইরাস কিন্তু একবারও ক্লান্ত হচ্ছে না। কাজেই খুবই গুরুত্ব দিয়ে এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে হবে।

লেখক: সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আইইডিসিআর