Thank you for trying Sticky AMP!!

আদালতকক্ষে মীর কাসেম আলীর ঔদ্ধত্য

একাত্তরের মানবতাবিরোধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম প্রিজন ভ্যান থেকে দুই হাতে ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান। রায় ঘোষণার পর তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। কারাগারে প্রবেশের আগমুহূর্তে তিনি এভাবেই ক্যামেরায় ধরা পড়েন। ছবি: আশরাফুল আলম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডটি মোটেই অস্বাভাবিক নয়। একাত্তরে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল আলবদর, রাজাকার ও আলশামস বাহিনী। যুদ্ধাপরাধে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের তিন দিন পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির টানা হরতালের হুমকির মধ্যেই এ রায় এল।

কিন্তু অাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণার সময় মীর কাসেম আলী যেসব মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তাঁর আচরণ ছিল উচ্ছৃঙ্খল ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস্য মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে ও দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে।

আংশিক প্রমাণিত দুটি অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ আটজনকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে তিন বিচারক সর্বসম্মত প্রাণদণ্ডের রায় দিলেও ১২ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির সিদ্ধান্ত হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ের মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায় পড়ার পর মাননীয় বিচারকদের উদ্দেশ করে মীর কাসেম আলী ‘মিথ্যা ঘটনা’, ‘মিথ্যা সাক্ষী’, ‘কালো আইন’, ‘ফরমায়েশি রায়’ ইত্যাদি মন্তব্য করেন, যা সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননা। আদালতের রায়ে কোনো পক্ষ বিক্ষুব্ধ হলে আইনানুগভাবেই তার প্রতিবাদ জানাতে পারে। উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারে। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই আদালতকে চ্যালঞ্জ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে না।
অথচ মীর কাসেম আলী সেই কাজটিই করেছেন। তিনি কেবল আদালত নয়, আইন, বিচারক, সাক্ষী সবার প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার খবর অনুযায়ী তিনি ‘শয়তান’ ‘শয়তান’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
এসব আচরণ ও মন্তব্যের মাধ্যমে একাত্তরের আলবদর কমান্ডার নিজের ক্লেদাক্ত চরিত্র ও বিকট চেহারাই সবার সামনে তুলে ধরলেন। আদালত তাঁর রায়ে যে মীর কাসেম আলীকে ‘বাঙালি খান’ বলে অভিহিত করেছেন, মীর কাসেম আলী স্বীয় আচরণ দিয়ে তারই সত্যতা প্রমাণ করলেন।
যুদ্ধাপরাধ আদালতে এর আগে যে ১০টি রায় হয়েছে, কোনোটিতেই এ রকম ঘটনা ঘটেনি। একটি ছাড়া বাকি সব রায়ই হয়েছে আসামিদের উপস্থিতিতে। কিন্তু তাঁদের কেউ আসামি মীর কাসেম আলীর মতো দম্ভ দেখাননি।
মীর কাসেম আলী যদি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে না চান, যদি উচ্চ আদালতে আপিল না করেন, সেই অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তাই বলে আদালতকক্ষে মাননীয় বিচারকদের গালিগালাজ করার অধিকার তাঁর নেই। আমরা মনে করি, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অতীত কৃতকর্মের শাস্তি সবাইকে পেতেই হবে।
এখানে আদালতের রায় বিস্ময়কর নয়, বিস্ময়কর হলো এ রকম একজন প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীর আদালতকক্ষে দাঁড়িয়ে বিচারক ও আইনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারা। এ দুঃসাহস তিনি কোথা থেকে পেলেন?