Thank you for trying Sticky AMP!!

আদিবাসীদের ওপর হামলা ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে

পার্বত্য চট্টগ্রাম

পাহাড়ের উর্বর জমি দখল করার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে আদিবাসীরা। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী তাইন্দং এলাকায় ৩ আগস্ট আদিবাসীদের ওপর হামলার ঘটনা ছিল ওই পরিকল্পনারই অংশ। ওই এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার পর নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদল পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছে।অপহরণের গুজব ছড়িয়ে ৩ আগস্ট তাইন্দং এলাকার ১৩টি আদিবাসী পাড়ায় পাহাড়িদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ কারণে ৯০২টি আদিবাসী পরিবার সাময়িক বাস্তুহারা হয়, যাদের মধ্যে ৪৫৬ পরিবার ভারতের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তারা আবার নিজ ভিটেবাড়িতে ফিরে এসেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফনী ভূষণ চাকমা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তাইন্দংয়ে আমরা ছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখন আমাদের সদস্যসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু বাঙালিরা ধীরে ধীরে বসতি স্থাপন করায় ওরা আমাদের তিন-চার গুণ বেশি হয়ে গেছে। ওরা গুজব ছড়িয়ে আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ চাকমা বলেন, ‘আমাদের জমিগুলো তিন ফসলি। সার ছাড়াই কম পরিচর্যায় ভালো ফসল হয়। আমাদের জমিগুলোর দিকেই তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে।’ তাইন্দং মৌজার হেডম্যান প্রভাত চন্দ্র রোয়াজা বলেন, তাইন্দং এলাকার অধিকাংশ কৃষিকাজের উপযোগী জমি পাহাড়িদের ছিল। এখন তা বাঙালিদের দখলে। তালুকদারপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘কাগজপত্রে অনেক জমির মালিকানা পাহাড়িদের। সেই জমি পাহাড়িরা ভোগ করতে পারছে না। বেদখল হয়ে আছে।’ সর্বেশ্বরপাড়ার কার্বারি তনয় শশী চাকমা বলেন, ‘বাঙালিরা বেছে বেছে সচ্ছল আদিবাসীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সচ্ছল পাহাড়িদের আর্থিকভাবে দুর্বল করেই বেকায়দায় ফেলে কৃষিজমি দখল করাই তাদের উদ্দেশ্য।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি জমিতে ধানের বিপুল ফলন হয়েছে।তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সোমবার ঢাকায় ফিরে গেছে। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক নোমান আহমদ খান। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী। দলটি গতকাল সকালে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. মোজাম্মেল হক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যসচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড়ে সব হামলার মূলে রয়েছে ভূমি বেদখল। অপপ্রচার চালিয়ে পাহাড়িদের ওপর হামলা চালানো হয়, যাতে তারা ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরে ধীরে ধীরে ওই ভূমি দখল করাই হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। তাই আমরা ভূমি কমিশনের আইন দ্রুত প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।