Thank you for trying Sticky AMP!!

আমন বীজের সংকট, দ্বিগুণ দামে বিক্রি

শুরু হয়েছে আমন রোপণ মৌসুম। তাই কৃষক জমি প্রস্তুত শেষে ধান রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবিটি গতকাল দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার বলিমামুদপুর এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আমন বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়ায়ও একই পরিস্থিতি। এই সুযোগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সরবরাহ করা বীজ দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তাঁরা।

বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএডিসির বিআর-২২, বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ বীজের মূল্য ৩৫ টাকা কেজি দরে ১০ কেজির এক বস্তা কৃষক পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ টাকা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই বীজ ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বিএডিসি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র বলছে, এ বছর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ছয় জেলায় বিএডিসির আমন বীজের চাহিদা ছিল ৭৪০ টন। চাহিদা অনুযায়ী বীজও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় ১১২ টন ও পটুয়াখালী জেলায় ৯৯ টন বীজ সরবরাহ করা হয়। বরিশাল জেলায় আমন বীজের চাহিদা তুলনামূলক কম। বাকি পাঁচ জেলার মধ্যে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলায় চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তা ও ডিলার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে এসব বীজ বিক্রি করছেন।

বরগুনার আমতলী কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই উপজেলায় বিএডিসির নিয়োগ করা ১১ জন ডিলারকে ৭০ টন বীজ সরবরাহ করে বিএডিসি। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হলেও আমতলীতে বীজের সংকট চলছে।

উপজেলার গাজীপুর গ্রামের কৃষক আলী মোল্লা বলেন, স্থানীয় এক বীজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি তিন বস্তা বিআর-২৩ বীজ ৮৫০ টাকা দরে ২ হাজার ৫৫০ টাকায় কিনেছেন।

ডিলারদের একটি সূত্র জানায়, কতিপয় ডিলার সিন্ডিকেট করে বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বীজ তুলে মজুত করেছেন। এতে অন্য ডিলাররা ওই ডিলারদের কাছ থেকে বেশি মূল্যে বীজ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত শনিবার আমতলী শহরের হাসপাতাল সড়কের মামুন এন্টারপ্রাইজ নামের বীজ ডিলারের দোকানে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বরাদ্দের তুলনায় বেশি বীজ মজুত ও বেশি দামে বিক্রি করায় ডিলারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পটুয়াখালীর বাউফলের কালিশুরী এলাকার বিএডিসির ডিলার কবীর দুয়ারী বলেন, জেলা সদর থেকে বীজ সরবরাহ করতে না পারায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ বীজ ভান্ডার থেকে প্রতি বস্তা (১০ কেজি) ৬০০ টাকায় কিনেছেন।

বরাদ্দের চেয়ে ডিলারদের বেশি বীজ সরবরাহের কথা অস্বীকার করে বিএডিসির বরগুনা-পটুয়াখালী আঞ্চলিক বীজ বিপণনকেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিলারদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করেছি। কিন্তু কী কারণে বেশি দামে বীজ বিক্রি করা হচ্ছে তা আমাদের পক্ষে তদারকি করা সম্ভব নয়। এটা করার জন্য প্রতি উপজেলায় একটি মনিটরিং কমিটি রয়েছে।’

কুষ্টিয়ায় বেশি দামে আমন বীজ বিক্রির দায়ে গত চার দিনে তিনটি দোকানের মালিককে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা বলছেন, এ জেলায় চাহিদার চেয়ে অনেক কম বীজ দিয়েছে বিএডিসি। কৃষকেরা চড়া দাম পাওয়ায় বীজধান বিক্রি করে দিয়েছেন। বিএডিসির বীজের মান ভালো হওয়ায় এবং ধানের দাম বেশি পাওয়ায় আমন আবাদে আগ্রহ বেড়েছে। এতে বীজের সংকট দেখা দিয়েছে।

বিএডিসির কুষ্টিয়া আঞ্চলিক বীজ বিপণনকেন্দ্র সূত্র জানায়, জেলায় আমনের মোট বীজের চাহিদা প্রায় ২ হাজার ২০০ টন। চাহিদা দেওয়া হয়েছিল ৩০০ টন। এর বিপরীতে কুষ্টিয়া বিএডিসি বরাদ্দ পেয়েছিল মাত্র ২৬৮ মেট্রিক টন। বীজ আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিলাররা নিয়ে গেছেন।

সদর উপজেলা, মিরপুর, দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ২০ জন কৃষক অভিযোগ করেন, জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিলারদের কাছ থেকে বিএডিসির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ডিলারের বাইরে ব্যবসায়ীদের দোকানে বেশি দামে বীজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি বীজের সরকার-নির্ধারিত মূল্য ৪০ টাকা। চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা সেই বীজ ৬০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

বিএডিসির কুষ্টিয়া আঞ্চলিক বীজ বিপণনকেন্দ্রের উপপরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, এ বছর কৃষকেরা বেশি হারে আমন ধানের চাষ করছেন। তাতে বীজ পেতে কিছু সমস্যা হয়েছে। বীজ-সংকট ও নানা সমস্যা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে সব জানানো হচ্ছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল এবং কুষ্টিয়া অফিস ও বরগুনা প্রতিনিধি]