Thank you for trying Sticky AMP!!

আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচব: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার অপরিসীম প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিকে ধারণ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একত্রে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভকারী বিজয়ী জাতি। আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচব।’

আজ বৃহস্পতিবার যশোরে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স (বিএএফ) একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিএএফ প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত আবক্ষমূর্তি উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমি প্রাঙ্গণে পৌঁছালে বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিএএফ বেস-এর এয়ার অফিসার কমান্ডিং এয়ার ভাইস মার্শাল ফজলুল হক এবং বিএএফ একাডেমির কমান্ড্যান্ট এয়ার কমোডর যাবেদ তানভীর খান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে সর্বাধুনিক ও অগ্রসর বাহিনীতে পরিণত করতে চাই। ভবিষ্যতে এই বাহিনীর উন্নয়নে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। আগামী নির্বাচনে যদি আমরা বিজয়ী হই, তাহলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাই মিলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমানবাহিনী গঠনের। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয় সে সময়কার অত্যাধুনিক মিগ-২১, সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার। তিনি বলেন, ‘আমরা বিমানবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয় চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০০৯ সাল থেকে বিগত বছরগুলোতে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন ও অপারেশনাল সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক সেলুন হেলিকপ্টার, মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিংয়ের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রথমবারের মতো ফাইটার বিমানের ওভারহলিংয়ে সক্ষম হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এ কৃতিত্বের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান।

বিমানবাহিনীকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরে বিমান তৈরি, মেরামত এবং এ–সম্পর্কিত প্ল্যান্ট বা ইন্ডাস্ট্রি তৈরির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাদের নিজেদের তৈরি বিমান উড্ডয়নে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। এ জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অত্যাধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও অসামরিক স্থাপনাসমূহ, বিশেষ করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের’ আকাশসীমা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে কক্সবাজারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আকাশসীমা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজারে নতুন এয়ার ডিফেন্স রাডার স্থাপন করা হয়েছে। সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, চোরাচালানবিরোধী অভিযানসহ যেকোনো প্রয়োজনে বিমানবাহিনী সহায়তা দিয়ে আসছে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের আকাশসীমার ওপর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শনাক্তকরণ এলাকা নির্ধারণে সক্ষম হয়েছি। এই শনাক্তকরণ অঞ্চল বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অব্যবহৃত এয়ারফিল্ডসমূহকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনাও আমাদের সরকারের আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিমানবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমানসেনাদের প্রশিক্ষণ কোর্সও যুগোপযোগী করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক জেট ও পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমান, হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং এমআই সিরিজ হেলিকপ্টার সিম্যুলেটর সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বরিশাল ও সিলেটে বিমানঘাঁটি স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলমান আছে। অ্যাভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলো। এই প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল বাংলাদেশের যথার্থতা প্রমাণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দক্ষ ও চৌকস জনশক্তির জোগান দিতে নির্মিতব্য “বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট” সক্ষম হবে। এ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত ও তত্ত্বীয় জ্ঞাননির্ভর বিমানসেনা গড়ে তুলবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের জন্য দক্ষ ও পেশাদার বৈমানিক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে গত বছরের ২ জুলাই স্থাপিত হয় ১০৫ অ্যাডভান্স জেট ট্রেনিং ইউনিট। এ ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে ক্রয় করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফ্রাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিট সংবলিত ওয়াইএকে-১৩০ কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান, যা এ পর্যন্ত তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর অন্যতম। আজ থেকে এ ইউনিট তাদের কার্যক্রম শুরু করল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজানে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও সিলেট থেকে প্যারা কমান্ডো দলকে ঢাকায় পরিবহন করে। এ কমান্ডো দলটি জঙ্গি নির্মূলে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করে। তিনি বলেন, সুদীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণ-এর আওতায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধসজনিত উদ্ধারকাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্য নিহত হন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুতর আহত এবং নিহত ব্যক্তিদের হেলিকপ্টারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করে। তিনি বলেন, নেপালে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জন বাংলাদেশির মরদেহ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে দেশে আনা হয়। মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে বিমানবাহিনী সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার বরাবরই শাসক নয় বরং জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়। আমাদের নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত প্রায় এক দশকে আমরা সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, “আমাদের কেউ দাবায় রাখতে পারবে না”। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভকারী বিজয়ী জাতি। আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচব।’
প্রধানমন্ত্রী এই সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আমি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমির বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স, বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ১০৫ জেট ট্রেনিং ইউনিটের কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।