Thank you for trying Sticky AMP!!

আম্পানের কারণে এক কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন

ফাইল ছবি

আম্পানের কারণে দেশের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরের ২৫ জেলার ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক ঝড়ের আগেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এসব জেলার বেশির ভাগ স্থানে ঝড় শুরু হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। আর ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় এসব স্থানে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না। এখন সারা দেশে এক কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।

বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর সূত্রে এ কথা জানা গেছে। সংস্থাগুলো বলছে, আজ রাত ১২টার মধ্যে বেশির ভাগ গ্রাহক এবং কালকের মধ্যে বাকিরা আবার বিদ্যুৎ-সুবিধা পাবেন। সেভাবেই কাজ চলছে। দেশে মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৬৪ লাখ।

এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় এসব এলাকার কোথাও কোথাও মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও নেটওয়ার্ক দুর্বল। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (আরইবি) অন্যান্য বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা গেছে।


বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও বগুড়াতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরইবি। এসব অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানের বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার আগে স্বাভাবিক হবে, তবে কিছু এলাকায় কালকেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
এর মধ্যে অন্যতম হলো কুষ্টিয়া। সেখানে একটি গ্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। এটি ঠিক করতে সময় লাগবে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে প্রকৌশলী কুষ্টিয়ায় চলে গেছেন মেরামত করতে।

আরইবির সারা দেশে ৮০টি সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির হিসেব দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, ১ হাজার ২০০-এর মতো পোল ভেঙে গেছে। অসংখ্য পোল হেলে পড়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪০ হাজার জায়গায় বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সোয়া কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ সরবরাহের বাইরে ছিল আরইবির।

বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠিসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কিছু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সকাল থেকেই শুরু হয়। আরইবির চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সাজার, যশোর, খুলনা, বরিশাল, অঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। তবে রাস্তায় গাছ পড়ে থাকায় তা সরিয়ে যেতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছে আরইবি।

আম্পানের প্রভাবে দেশের কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণে খুব একটা ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। হবে পিডিবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সন্দ্বীপ, টাঙ্গাইল এবং জামালপুরে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, যা আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে।

বিদ্যুতের সঞ্চালনব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), বিতরণ সংস্থা আরইবিসহ অন্যান্য বিতরণ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এসব সংস্থার কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঝড়ের কারণে ওজোপাডিকোর ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থাটির ১২ লাখ ৩৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন আরইবির গ্রাহকেরা। দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা আরইবির ১ কোটি ২৫ লাখ গ্রাহক ঝড়ের কবলে পড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। সংস্থাটির সারা দেশে ২ কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে পেরেছে। অধিকাংশ এলাকা এখনো বিদ্যুৎহীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবির চেয়ারম্যান মো. মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের এক কোটির ওপর গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে।’

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। ঝড়ের কারণে গতকালই আমাদের সব গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ঝড় শেষে কিছু এলাকায় ভোর রাত থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। ১৯ জেলাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। দুটি জেলাতে সমস্যা রয়েছে, তা দ্রুত মেরামত করতে আমাদের প্রকৌশলী, লাইনম্যান ও ঠিকাদারেরা কাজ করছে।’

প্রতিমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক

বিদ্যুৎ. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাঁর বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ ও এর কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পিজিসিবি, আরইবি, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিওপিজিসিএল) বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

নসরুল হামিদ বলেন, যে সমস্যাই হোক না কেন, ‘অতিদ্রুত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করুন। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনে জেনারেটর সরবরাহ করে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিন।’ সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভার্চ্যুয়াল এ সভায় অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎসচিব সুলতান আহমেদ, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেনসহ বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।