Thank you for trying Sticky AMP!!

আরএসএফ শ্রদ্ধা জানাল কার্টুনিস্ট কিশোরসহ ৩০ জনকে

বাংলাদেশের কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীরসহ ৩০ সংবাদকর্মী, সংবাদমাধ্যম ও হুইসেল ব্লোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে আরএসএফ। ছবি: আরএসএফের ওয়েবসাইট

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) কারাবন্দী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরসহ ৩০ সংবাদকর্মী, সংবাদমাধ্যম ও হুইসেল ব্লোয়ার বা সতর্ককারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আরএসএফ বলছে, এসব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের সাহস, ঐকান্তিকতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা মহামারিতে বিশ্বাসযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রসারে কাজ করেছেন। আর এ জন্য তাঁদের দিতে হয়েছে চড়া মূল্য।

প্যারিসভিত্তিক স্বাধীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরএসএফ এই ত্রিশকে বলছে ‘ইনফরমেশন হিরোজ’। এ উপলক্ষে আরএসএফ ‘করোনাভাইরাস: ইনফরমেশন হিরোজ—জার্নালিজম দ্যাট সেভস লাইভস’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তারা বলেছে, মহামারির সময় মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁদের কেউ কেউ জেল খেটেছেন, কেউ কারারুদ্ধ হয়েছেন, কেউ আর কখনোই সাংবাদিকতা করতে পারবেন না, কেউ আবার এই করোনার কালেই দেশান্তরি হয়েছেন।

বাংলাদেশের আহমেদ কবীর কিশোর সম্পর্কে আরএসএফ বলেছে, তিনি করোনাকালের রাজনীতি ও দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে ‘লাইফ ইন দ্য টাইম অব করোনা’ নামে একটি কার্টুন জার্নাল প্রকাশ করছিলেন। গত ৫ মে থেকে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আছেন, তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ফেসবুকে গুজব ও মিথ্যে তথ্য ছড়িয়েছেন।

তালিকায় বাংলাদেশি আরেক সাংবাদিক

তালিকায় স্থান পেয়েছেন সালিম আকাশ নামের আরেক বাংলাদেশি সাংবাদিক। জর্ডানে বসবাসকারী সালিম করোনাকালে বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন। তিনি দেখান কীভাবে অভিবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের ভাগ্য যে এখন দেশটির কর্তৃপক্ষের হাতে, তারও উল্লেখ করেন সালিম। তাঁর এ প্রতিবেদনটি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। ১৪ এপ্রিল সাদাপোশাকে জর্ডান পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে তাঁকে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে নেওয়া হয়। এখন তিনি আছেন জর্ডানের আল সল্ট কারাগারে।

জর্ডান কারাগারে আছেন বাংলাদেশি সাংবাদিক সালিম আকাশ। ছবি: আরএসএফের ওয়েবসাইট



জর্ডান থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলে সেলিম আকাশকে আটকের পরপরই জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেছে দূতাবাস। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে জর্ডানের কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। সালিম আকাশ যেন বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করতে পারেন, সে জন্য দূতাবাস তাঁর জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছে। এ ছাড়া তিনি ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত টেলিফোনে যোগাযোগ রাখছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান, পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কমোরোজ, বাহরাইন, টোগো, আইভরি কোস্ট, এসোয়াতিনি (সোয়াজিল্যান্ড), ব্রাজিল, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, ইকুয়েডর, আলজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও বেলারুশের সাংবাদিক ও সতর্ককারী, রাশিয়ার ২৫ গণমাধ্যমের মঞ্চ সিন্ডিকেট-১০০, হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, রেডিও করোনা ইন্টারন্যাশনাল, ইকুয়েডরের প্রেস ফ্রিডম গ্রুপ ফান্ডামেন্ডিয়সকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আরএসএফ।

আহমেদ কবীর কিশোরের এই ছবি ওয়েবসাইটে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকাশ করেছে আরএসএফ

কিশোর ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর আর্থিক খাতের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির আক্রোশের শিকার বলে জানিয়েছেন তাঁর এক স্বজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোরকে মন্ত্রী বা এমপিদের নিয়ে কার্টুন করার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির কার্টুন কেন এঁকেছে, সে প্রশ্ন করা হয়েছে হাজারবার। কিশোর ছাড়াও ওই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব। মিনহাজের সঙ্গে আর্থিক খাতের ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বন্দ্ব ছিল চরমে। কিশোরকে বারবার প্রশ্ন করা হয় ওই ব্যক্তির কার্টুন আঁকতে মিনহাজ তাঁকে কত টাকা দিয়েছেন।’

‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের বেশ কিছু কার্টুন প্রকাশিত হয়। গত মঙ্গলবার (১৬ জুন) ভার্চ্যুয়াল আদালত কিশোরের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের।

আরও পড়ুন: কার্টুনিস্ট কিশোরসহ চারজনের সঙ্গে দেখা করতেই পারছে না পরিবার