Thank you for trying Sticky AMP!!

আরও বাড়ল মাংসের দাম, অজুহাত শবে বরাত

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ধর্মঘটের পর ৪০০ টাকার এক কেজি গরুর মাংসের দাম প্রায় ৫০০ টাকায় উঠে যায়। সেই মাংসের মূল্য আরও এক ধাপ লাফিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ৬০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। এবার মাংস ব্যবসায়ীরা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন শবে বরাতকে। তাঁদের অভিযোগ, শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে গাবতলীর পশুহাটে ইজারাদারেরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করায় মাংসের দাম বেড়ে গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আজ সকাল থেকেই গরুর মাংস কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল। যেসব দোকানে একটি গরু জবাই করা হতো, আজ সেখানে পাঁচ থেকে ছয়টি গরু জবাই করা হয়। এলাকাভেদে মাংসের দামেরও পার্থক্য ছিল। মিরপুর, আগারগাঁও এলাকায় এক কেজি মাংস রাখা হয় ৫০০ টাকা। আগারগাঁওয়ের পাশের এলাকা কল্যাণপুরে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়। একটু এগিয়ে গেলে মোহাম্মদপুরে এর দাম ৫২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় ওঠানামা করে। রায়ের বাজারে ৫৫০ টাকা।

মিরপুর ১০ নম্বরের মাংস বিক্রেতা মো. বিপ্লব বলেন, ‘আইজ ছয়টা গরুর জবাই করছি। দুই দিন ধইরা ৫০০ টাকা কেজি গোস (মাংস) বেচতাছি। শবে বরাতের লাইগা একটা গরুতে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বেশি খাজনা দিতে হইছে। হের লইগা দাম বেশি। কাইল আবার ৪৮০ টাকায় বেচমু।’

কল্যাণপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এক কেজি মাংসে ৪০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। কেন হচ্ছে জানি না। জবাবদিহি করার কেউ নেই। তবে মাংস কিনতে হবে তাই কিনছি।’

কিন্তু সুপারশপগুলোতে দামের পার্থক্য থাকলেও শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংসে দাম বাড়েনি। প্রিন্স বাজারে ৪৬০ টাকা, মিনা বাজারে ৪৮০ টাকা ও স্বপ্নের শাখাগুলোতে ৪৮৫ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। আজও একই দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।

বেশি দামে মাংস বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘গতকাল গাবতলী পশুর হাটে লুটের মতো খাজনা আদায় করা হয়েছে। একটি গরুতে পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা নেওয়া হয়েছে। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের অপেক্ষায় আছি। ওনার সঙ্গে বৈঠক করে মাংসের দাম নির্ধারণ করার কথা রয়েছে। ২৫ অথবা ২৬ মে আমরা কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারি।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাংস দামে পার্থক্য সম্পর্কে রবিউল আলম বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রামপুরা এলাকায় ৬০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমরাও চাই না এভাবে মাংস বিক্রি হোক। কিন্তু খাজনাসহ নানা জুলুমের শিকার হচ্ছি। প্রশাসন চাইলে দুই মিনিটে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।’

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগে মাংস ব্যবসায়ীদের গরুপ্রতি ৫০ টাকা, মহিষ ৭০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫ টাকা করে খাজনা দিতে হতো। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাজনা পশুর দামের শতকরা সাড়ে তিন টাকা নির্ধারিত ছিল। সম্প্রতি এই খাজনা গরুপ্রতি খাজনা ১০০ টাকা, মহিষের খাজনা ১৫০ টাকা ও ছাগলের জন্য খাজনা ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া মাংস ব্যবসায়ীদের তালিকা অনুযায়ী এই হারে খাজনা নিয়ে গরু, মহিষ ও ছাগল বিক্রি করছেন ইজারাদারেরা। অবশ্য সাধারণ ক্রেতাদের জন্য পশুর খাজনা শতকরা সাড়ে তিন টাকাই রয়েছে।

সরকারের নির্ধারিত হারে খাজনা রাখা হচ্ছে জানিয়ে গাবতলী পশুর হাটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শবে বরাতের জন্য একটু চাপ আছে। তবে গরুর জোগান ঠিকই আছে। আমরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া মাংস ব্যবসায়ীদের তালিকা থেকে খাজনা নিচ্ছি। তবে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি নিজেদের মতো করে একটি তালিকা করেছে। তাদের লোকজন বেশি দামে মাংস বিক্রি করছে।’

মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন রমজান মাসে গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা নেই। ঈদের আগে মাংসের দাম শবে বরাতের মতো অজুহাত দেখিয়ে আরও এক দফা বাড়তে পারে।