Thank you for trying Sticky AMP!!

আরও বাড়ি-মন্দিরে হামলা

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায় । ছবি: প্রথম আলো

দেশের কয়েকটি স্থানে গত মঙ্গলবার রাতে ও গতকাল বুধবার সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটে একটি বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেওয়ার পর ভয়ে ও আতঙ্কে মারা গেছেন ওই বাড়ির গৃহকর্তা। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ও নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আগুন দেওয়া হয়েছে মন্দিরে। জামালপুরে আদিবাসীদের কয়েকটি বাড়িতে হামলা এবং একটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
এ ছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে একটি বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হিন্দু বাড়িতে ‘চিরকুট’ লাগিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
জয়পুরহাটে বাড়িতে আগুন, ভয়ে একজনের মৃত্যু: পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পাঁচবিবি উপজেলার সোনাকুল গ্রামের সুজেন কুমার দাসের বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলে পরিবারের সবাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এ সময় সুজেন কুমার ভয়ে ও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতেই তিনি মারা যান।
সুজেনের বড় ভাই ভুপেন চন্দ্র দাস জানান, দুর্বৃত্তরা খড়ের পালায় আগুন দিলে ভয়ে ও আতঙ্কে হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর ভাই মারা যান। একই রাতে সদর উপজেলার পূর্ব পারুলিয়া গ্রামের সুকুমারের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে জয়পুরহাট শহর থেকে দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
ত্রিশালে মন্দিরে আগুন: উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের তিরখী গ্রামের রাধা গোবিন্দ দয়াল মন্দিরে মঙ্গলবার রাত দুটাির দিকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় চারটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। এলাকাবাসী দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে।
মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ও কালীর বাজার ফাতেমানগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার তরফদার জানান, দুর্বৃত্তরা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আগুনে মন্দিরের একটি হারমোনিয়াম ও কার্পেট পুড়ে গেছে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, নাশকতা, নাকি আগুন লেগেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলমাকান্দায় মন্দিরে আগুন: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বটতলা গ্রামের একটি সর্বজনীন কালীমন্দিরে গত মঙ্গলবার রাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কয়েকটি মূর্তির কাপড় ও চুল পুড়ে যায় এবং কয়েকটি প্রতিমার বিভিন্ন অংশের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা মন্দিরের আসবাব লুটে নিয়ে গেছে।
সদ্য নির্বাচিত স্থানীয় ছবি বিশ্বাস, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন গতকাল মন্দিরটি পরিদর্শন করেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
মন্দির কমিটির সভাপতি অনিল বিশ্বাস জানান, ‘কে বা কারা রাতের আঁধারে মন্দিরে আগুন দিয়েছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
জামালপুরে আদিবাসীদের ওপর হামলা: সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভাগড়া এলাকায় গত মঙ্গলবার সকালে কয়েকটি আদিবাসী পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীরা জানান, নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ায় স্থানীয় নির্বাচনবিরোধীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাঁদের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা একটি ঘরে আগুন দেয়। হামলার সময় পলিনুস সাংমা, পলিতা সাংমা, নির্মলা সাংমা, মনেন মারাক, মাধবী সাংমা, প্রতিবেশী বিপুল খান ও মনজুরুল হক গুরুতর আহত হন। এঁদের মধ্যে চারজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সদর থানার ওসি মুজিবুর রহমান মজুমদার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে জামালপুর দয়াময়ী মন্দিরে সংবাদ সমেঞ্চলন করে আদিবাসীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
হাতিয়ায় খড়ের গাদায় আগুন: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ তমরদ্দি গ্রামের প্রদীপ দাসের একটি খড়ের গাদায় দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। প্রদীপের স্ত্রী নীলিমা জানান, আগুনে খড়ের গাদাটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
মঠবাড়িয়ায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়ি ও মন্দিরে হামলা: পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের আলগী গ্রামের অনিল চন্দ্র হাওলাদার তিন মাস আগে স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলামের কাছে এক একর ২১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। এর কিছুদিন পর অনিলের চাচাতো ভাই শৈলেন হাওলাদার তাঁর ৯০ শতাংশ জমি বিক্রি করেন স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস ফকির ও আবদুল খালেক ফকিরের কাছে।
অনিল অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নজরুল ইসলামকে তাঁর জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার সময় কুদ্দুস ফকির লোকজন নিয়ে বাধা দেন। এ ঘটনার পর বিকেলে কুদ্দুস ফকির ২০-২৫ জন লোক নিয়ে অনিলের বাড়ি ও বাড়ির মন্দিরে হামলা চালায় এবং তাঁকেও মারপিট করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুদ্দুস ফরিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রব খান জানান, আবদুল কুদ্দুস ফকিরকে প্রধান আসামি করে অনিল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নবীনগরে চাঁদা দাবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা সদরের বণিক পাড়ার প্রদীপ সেনগুপ্তের বাড়ির দরজায় মঙ্গলবার রাতে চাঁদার দাবি জানিয়ে ‘চিরকুট’ লাগিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করে চাঁদা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় পেট্রল ঢেলে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
নবীনগর থানার ওসি আবু জাফর জানান, ঘটনা উল্লেখ করে প্রদীপ সেনগুপ্ত থানায় একটি জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘোড়াঘাটে রাত জেগে পাহারা: নির্বাচনোত্তর সহিংসতার আশঙ্কায় রয়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। উপজেলার ১ নম্বর বুলাকিপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণরামপুর গ্রামের বাসিন্দারা রাত জেগে পালাক্রমে এলাকায় পাহারা দিচ্ছে।
কৃষ্ণরামপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, মোশতাক হোসেন, ফিরোজ রশিদ জানান, ভোটের দিন রাতে গ্রামের ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এ সময় সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। এর পর থেকে দুর্বৃত্তরা গ্রামে হামলার হুমকি দিচ্ছে। এই ভয়ে তাঁরা রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন।
গাইবান্ধায় আতঙ্ক কাটেনি: সদর উপজেলার বেড়াডাঙ্গা গ্রামে গত সোমবার রাতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
মামলার বাদী বেড়াডাঙ্গা গ্রামের ননী গোপাল বলেন, ‘পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এই অবস্থায় হামলাকারীরা বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তবে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে গতকাল সিপিবির জেলা শাখার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানান।
দিনাজপুরে পাল্টা অভিযোগ: গত রোববার নির্বাচনের দিন দিনাজপুরে সদর উপজেলার কর্নাই গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তা অস্বীকার করেছে বিএনপি। গতকাল দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, বরং ওই ঘটনার জের ধরে গত সোমবার রাতে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চেহেলগাজী ইউনিয়নের মহাদেবপুর সাহা পাড়া, বকরী পাড়া ও শুভ্রা গ্রামে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।