Thank you for trying Sticky AMP!!

আরও ১০৫ কেজি সোনা

বিমানের টয়লেটের ভেতরের এই ফাঁকা জায়গায় লুকানো ছিল সোনার বার । ছবি: সংগৃহীত

দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ থেকে আরও ৯০৪টি সোনার বার উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটির সাতটি টয়লেটের কমোডে ১০৫ কেজি ওজনের এসব সোনার বার পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আনিসুদ্দিন ভূঁইয়া নামের বাংলাদেশ বিমানের এক যান্ত্রিক সহকারীকে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে দুবাই থেকে আসা বিদেশি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের যাত্রীকে ২৮টি সোনার বারসহ আটক করা হয়েছিল।
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, এটি সোনা চোরাচালান উদ্ধারের তৃতীয় বৃহত্তম ঘটনা। এর আগে গত বছরের ২৪ জুলাই শাহজালাল বিমানবন্দরে ১২৪ কেজি ও চলতি বছরের ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ১০৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছিল। দুটি ফ্লাইটই বাংলাদেশ বিমানের।
গতকাল উদ্ধার হওয়া প্রতিটি সোনার বারের ওজন ১০ তোলা। সেই হিসাবে উদ্ধার হওয়া বারগুলোর মোট ওজন নয় হাজার ৪০ তোলা (১০৫ কেজি)। দাম প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
বিকেলে বিমানবন্দরের একটি কক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, সোনার বারগুলো আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন কৌশলে সাতটি টয়লেটের কমোডের ভেতরে রাখা হয়েছিল। দক্ষ কারিগর (টেকনিশিয়ান) দিয়ে কমোডের স্ক্রু খুলে এসব বার উদ্ধার করা হয়েছে। একইভাবে দক্ষ কারিগর দিয়েই এগুলো কমোডে লোকানো হয়েছিল। তিনি বলেন, এটা যদি দুবাইয়ে হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয়, বিমানের যান্ত্রিক বিভাগে কাজ করেন এবং বিমানে সহজে যাতায়াত করেন এমন ব্যক্তি দিয়েই সোনার বারগুলো কমোডে রাখা হয়েছে। এতে সময়ও লেগেছে বেশ।
বিমানের প্রকৌশলী আনিসুদ্দিন ভূঁইয়াকে আটকের ব্যাপারে গোলাম হোসেন বলেন, তিনি বাংলাদেশ বিমানের যান্ত্রিক সহকারী। তাঁর মুঠোফোনে স্বর্ণ চোরাচালান-সংক্রান্ত একটি খুদেবার্তার তথ্য শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে আসে। গতকাল সকাল নয়টার দিকে দুবাই থেকে বিমান অবতরণ করার পর গোয়েন্দারা তাঁকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাঁর মুঠোফোন যাচাই করে স্বর্ণ চোরাচালান-সংক্রান্ত খুদেবার্তা এবং ওই খুদেবার্তার প্রত্যুত্তর দেওয়ার প্রমাণ পান গোয়েন্দারা।
গোলাম হোসেন বলেন, কয়েক ঘণ্টা আনিসুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে তিনি ১০ বার ১০ জায়গায় সোনার বারের অবস্থানের তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর তথ্য অনুযায়ী, সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে সোনার বার পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয় যে সত্য বললে তাঁর কিছু হবে না। এমন আশ্বাস পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে তিনি স্বীকার করেন, বিমানের টয়লেটের ভেতরে সোনার বারগুলো আছে। বিমানের ১৪টি টয়লেটের মধ্যে সাতটিতে পাওয়া যায় সোনার বার।
‘সোনা চোরাচালান বেড়েছে কি না’—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম হোসেন বলেন, অবৈধ পথে আসা সোনা উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে। এখন উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সোনা চোরাচালানও বেড়ে গেছে কি না, তা বলা মুশকিল। চোরাচালানের কত অংশ উদ্ধার হয়, তা-ও বলা সম্ভব নয়।
সোনা চোরাচালানের কারণ সম্পর্কে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, স্বর্ণ যেকোনো অনিয়মিত ও অবৈধ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হয়। সেটা মাদক কিংবা যেকোনো পণ্য চোরাচালানি হোক, যেকোনো বিনিময়ের ক্ষেত্রে স্বর্ণ সর্বোত্তম একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া ভারতের সোনা আমদানি শুল্ক বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে চোরাচালানিরা বাংলাদেশকে একটি রুট হিসেবে ব্যবহার করে। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর যেখান থেকে সোনা আমদানি করা হচ্ছে, সেখানকার সোনার দামের সঙ্গে বাংলাদেশে সোনার দামের তারতম্য আছে। অনেকেই তাই অধিক লাভের আশায় সোনা চোরাচালান করে।
তবে গোলাম হোসেন বলেন, বৈধ পথে সোনা আমদানি বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে ৩৬০ কেজি সোনা বৈধভাবে এ দেশে এসেছে। এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। তবে সোনা চোরাচালান কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।