Thank you for trying Sticky AMP!!

আর্সেনিক শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাধা

প্রথম আলোর কার্যালয়ে আজ শনিবার ‘খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ: দুই যুগ পর ফিরে দেখা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা। ছবি: সাজিদ হোসেন

শরীরে আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে যত আলোচনা হয়, মানসিক প্রভাব নিয়ে ততটা হয় না। কিন্তু ভয়াবহ তথ্য হলো, আর্সেনিক শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক ক্ষেত্রে আর্সেনিকের প্রভাবে শিশু অটিজমেও আক্রান্ত হতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়টি উদ্বেগজনক। তাই বিষয়টি নিয়ে বড় আকারের গবেষণা করা দরকার।

আজ শনিবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ: দুইযুগ পর ফিরে দেখা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগজনক এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে আলোচনা। ইনস্টিটিউট অব লেবার ইকোনমিকস ও প্রথম আলো যৌথভাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে।

আলোচনার শুরুতেই আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব, এর মাত্রা, ছড়িয়ে পড়া ও রোধ করা বিষয়ক নানা প্রকল্পের উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী। ২০১৪ সালে চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের ১৫০টি গ্রামের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার কথা তুলে ধরেন তিনি। ওই গবেষণায় পরীক্ষার পর যেসব নলকূপের পানিতে বিপৎ​সীমার ওপরে (৫০ পিপিপি-প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা) আর্সেনিক রয়েছে সেগুলো লাল ও যেগুলো বিপৎ​সীমামুক্ত সেগুলো সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও গ্রামের অনেকে বাড়ির কাছের নলকূপ থেকে পানি পান করত। সেটিতে আর্সেনিক আছে না নেই, তা নিয়ে মাথা ঘামাত না। তিনি আরও জানান, নলকূপের পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে বিশেষ ধরনের ফিল্টার ব্যবহারেও গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে।

শিশুদের ওপর আর্সেনিকের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের একটি দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিফাত ই সাঈদ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়ংকর এই তথ্যটি তুলে ধরে তিনি বলেন, শরীরে আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব যেমন ত্বকের সমস্যা বা ক্যানসারের বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তবে মানসিক প্রভাব নিয়ে ততটা গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয় না। আর্সেনিক শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এমনকি আর্সেনিকের কারণে শিশু অটিজমেও আক্রান্ত হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে গর্ভস্থ সন্তানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে বড় আকারের গবেষণার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমামুল হক আর্সেনিক নিয়ে বেশ কিছু সচেতনতার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি জমির সেচকাজে ব্যবহৃত হয়। তাই ফসল ও সবজিতে আর্সেনিক মিশে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ নিয়ে তিনি তাঁর গবেষণার কথা তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে জমিতে জৈব সার ব্যবহার, পরিমাণমতো পানি দেওয়া, জেনেটিক ট্রিটমেন্টের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ধীরগতিতে শরীর ও মনে বিষক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে আর্সেনিক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন প্রশ্ন তোলেন, ভূগর্ভস্থ পানির বদলে ভূ–উপরিস্থ পানি ব্যবহার কেন হচ্ছে না? বাংলাদেশে প্রচুর ভূ–উপরিস্থ পানি রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগানোর ওপর তিনি জোর দেন।

আলোচনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লাউস এফ জিমারম্যান আর্সেনিকের শারীরিক ও মানসিক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন। আর্সেনিক দূষণ রোধে তিনি ভবিষ্যৎ কিছু প্রকল্প তুলে ধরেন।

আর্সেনিক দূষণরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক। সংবাদপত্র, টিভি, অনলাইন, কমিউনিটি রেডিওতে আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব ও সচেতনতার বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ ও প্রচারের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

ইনোভেশনস ফর প্রভার্টি অ্যাকশনের দেশীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ আশরাফুল হক আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে গবেষণা কার্যক্রমের ওপর জোর দেন। সরকারি ও বেসরকারি গবেষণার মধ্যে পার্থক্যের উল্লেখ করে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন তিনি। নলকূপের পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে ফিল্টার ব্যবহারে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি ছিল। ওই ইশতেহার পর্যালোচনা করে কতদিন পর এর সমাধান হতে পারে, তা নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প (পল্লি অঞ্চলে পানি সরবরাহ) পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাক, পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের (পপি) পরিচালক মো. মজিবর রহমান।

শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ আর্সেনিক দূষণরোধে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, আর্সেনিক নিয়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কোথায় কোথায় আর্সেনিক আছে, তা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে খুঁজে বের করতে হবে। সেসব জায়গার প্রকৃতি বুঝতে হবে। ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপরে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। ভূগর্ভস্থ ও ভূ–উপরিস্থ পানি ব্যবহারে সমন্বয় আনতে হবে।