আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, জাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা বাঁটোয়ারা করে দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবির বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এ অবস্থায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ চার কর্মকর্তার সঙ্গে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ২২ জন প্রতিনিধির বৈঠক শুরু হয়। তদন্তের দাবির বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের মতৈক্য না হওয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাউন্সিল কক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা বেরিয়ে যান।
এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে (আগামী রোববার থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলবে) উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনে অবাঞ্ছিত ও সর্বাত্মকভাবে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন তাঁরা। যতক্ষণ তিনি পদত্যাগ করবেন না, ততক্ষণ এই প্রত্যাখ্যান চলবে বলেও জানান আন্দোলনকারীরা। আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে ফারজানা ইসলাম পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অসমাপ্ত বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের বারান্দায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের মুখপাত্র রায়হান রাইন। তিনি বলেন, ‘টেন্ডার ছিনতাইয়ের বিচার না করা, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, ছাত্রলীগকে কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি পাঁচ মাস গোপন রাখা, টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সরাসরি স্বীকারোক্তি—এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ফারজানা ইসলাম উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’
এদিকে বৈঠক শেষে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে আন্দোলনকারীরা আমার পদত্যাগ দাবি করেছেন। কিন্তু আমি চাইলেই তো আর পদত্যাগ করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার তো শুধু তাঁরাই (আন্দোলনকারীরা) নন; তাঁদের বাইরেও অনেকেই আছেন। যদি সবাই মনে করেন আমি নৈতিক অবস্থান হারিয়েছি, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি ইউজিসিকে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) বলব যেন তারা একটা তদন্ত করে। তদন্ত চলাকালে আমাকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে কি না, তা আমি বলতে পারি না। সেটা বলবেন মহামান্য (রাষ্ট্রপতি)।’ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার দ্বার আর খোলা নেই বলেও জানান উপাচার্য।
বৈঠক বর্জন সহ–উপাচার্যের
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য আমির হোসেনসহ সাতজন শিক্ষকের মুঠোফোন–সুবিধা বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। এ সময় তাঁদের ফোনে কল আসা-যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাত থাকার অভিযোগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকে আমির হোসেন অংশ নেননি।
আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি। কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমার মোবাইল ফোনের সংযোগ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। আমি মনে করছি, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্পৃক্ততা আছে। এর প্রতিবাদে আমি বৈঠক বর্জন করেছি।’
আরও পড়ুন
-
দেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাব আসতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
-
ভোটে মুসলমান–জুজু কাজ হচ্ছে না, আদানি-আম্বানির কথা বলে কী সুবিধা চাচ্ছেন মোদি
-
যোগ্য প্রার্থী নেই, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের নিয়োগ স্থগিত
-
কালবৈশাখী হতে পারে ৮ বিভাগে, ৩ দিনের সতর্কবার্তা
-
‘মা লো মা’ নিয়ে বিতর্ক: নেত্রকোনা নাকি ঢাকা, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা