Thank you for trying Sticky AMP!!

আলো ছড়ানো প্রতিষ্ঠান আঁধারে ঢাকা

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে মনোরম পরিবেশে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ভবনটি বিদ্যুৎহীন পড়ে আছে l ছবি: প্রথম আলো

চত্বরটা গাছগাছালিতে ছাওয়া, বেশ পরিপাটি। তার ভেতর ছিমছাম একটা ভবন। প্রবেশমুখেই লেখা, ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবন, কর্ম ও আদর্শ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে তাঁর জন্মভূমি রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিকেন্দ্রটি। মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, গ্রন্থাগার, গবেষণাকেন্দ্র, সংগ্রহশালা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র মিলে বেশ সমৃদ্ধ এটি। আলো ছড়ানো এই কেন্দ্রটি তিন মাস ধরে আঁধারে ঢাকা। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহও বন্ধ। গরমে পাখা ঘোরে না, পাঠকেরা গ্রন্থাগারে যেতে চান না। বইপ্রেমী পাঠকেরা এলেও গরমে অস্থির হয়ে পড়েন। মিলনায়তন ও সেমিনার কক্ষটিও বন্ধ। স্মৃতিকেন্দ্রে রয়েছে লোকবলের সংকট। মাত্র চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি বাংলা একাডেমি দ্বারা পরিচালিত হয়।

সম্প্রতি এক সকালে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অফিসকক্ষে বসে আছেন কেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্যাহ-আল ফারুক। তাঁর মাথার ওপরের পাখাটি বন্ধ। গরমে তিনি অস্থির। বললেন, দীর্ঘদিন ধরে সাত লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে। চলতি বছরের জুনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিকেন্দ্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বিষয়টি বাংলা একাডেমিকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে এক লাখ টাকার একটি চেক পাঠানো হয়, যা পল্লী বিদ্যুৎকে দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিদ্যুৎ মিলছে না। তারা পুরো বিল পরিশোধ চায়।

এরপর গ্রন্থাগারে ঢুকে দেখা গেল, ঘরের তিন দিকের আলমারিতে বই আর বই। চারটি পড়ার টেবিলে বসে কয়েকজন পাঠক বই ও পত্রিকা পড়ছেন। ঘরের এক কোণে চেয়ারে বসে আছেন সহ-গ্রন্থাগারিক বেগম আবেদা সুলতানা।

বই দেখতে দেখতে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফ রহমান বলল, বই পড়ার অভ্যাস অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এখানে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এই গরমে কোনোভাবেই বসে বই পড়ার পরিবেশ নেই।

কথা হলো বেগম আবেদা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘দেখতেই তো পারছেন কী অবস্থা! এখানে আর কী বলি বলেন? দর্শনার্থীরা এলেও বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যান।’

স্মৃতিকেন্দ্র কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবনটির মধ্যে রয়েছে ৩০০ আসনের মিলনায়তন, ১০০ আসনের সেমিনার কক্ষ, ১০ হাজার বই ধারণক্ষমতার গ্রন্থাগারে ২ হাজার বই। রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, সংগ্রহশালা, ২৫টি সেলাই মেশিনসহ একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সেই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসকক্ষ। এ ছাড়াও দুটি অতিথি ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য একজন উপপরিচালক ও অন্যজন সহ-গ্রন্থাগারিক ছাড়াও আছেন দুজন কর্মচারী। কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী হয়নি, তাঁরা মাস্টাররোলে কাজ করেন।

এখানকার কর্মচারী পায়রাবন্দের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘১৩ বছর ধরে এখানে আছি। তখন প্রকল্প ছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি এ বছর বাংলা একাডেমিতে হস্তান্তর করা হলে দুজন কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু আমার ও দারোয়ান আবদুল বাতেনের চাকরি স্থায়ী করা হলো না।’

স্মৃতিকেন্দ্র সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২৮ জুন বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালের ১ জুলাই এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোকেয়ার বসতভিটার সোয়া তিন একর জমির ওপর নির্মিত কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রকল্প ছিল, যা বাংলা একাডেমি দ্বারা পরিচালিত হতো। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০০৪ সালের ৫ অক্টোবর স্মৃতিকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে তা একই বছর এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এটি বিকেএমইর সেলাই কারখানা হয়েছিল। এরপর এই স্মৃতিকেন্দ্র চালু থাকলেও কোনো কার্যকারিতা ছিল না। চলতি বছর ২৯ মে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটিকে রাজস্ব খাতে নিয়ে বাংলা একাডেমির কাছে দেয়।

স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্ল্যাহ-আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার বসতভিটায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান হয়েছে, এটি গর্বের বিষয়। কিন্তু এখানে আমিসহ মাত্র দুজন কর্মকর্তা, যা পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার।’ মাস্টাররোলে দুজন কর্মচারীকে স্থায়ী করাসহ আরও কিছু কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চালুর পর থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এই টাকা পরিশোধ না হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে গত ২৬ জুন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক নূরুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের বকেয়া বিল। তাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এক লাখ টাকা দেওয়া হলেও বাকি টাকা না পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।